আজ আমার তৃতীয় শুভ বিবাহ…বার্ষিকী!
শিশুরা বড় হলে স্কুলে যায়! আর পুরুষ মানুষ করে বিয়া!
তবে পুরুষ মানুষের এই বিবাহকে শুভ-বিবাহ বলাতে আমার একটু ভিন্ন মত আছে! যাহা নিম্নে অতি-সংক্ষিপ্তাকারে বিবাহের দিনের কয়েক ঘণ্টার বর্ণনা থেকে আশা করি আপনারা বুঝতে পারবেন!
আমার বিয়ার চাঁদ উঠছে!
ওই দিনের মত আমাকে এত গুরুত্ব আর কেউ কোন দিন দেয় নাই। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রাইভেট গাড়িতে খুব আয়েশ করে অনুষ্ঠান স্থলে পৌঁছলাম।
অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ আমার গাড়ির দরজা খুলে দিলেন। ব্যাপারটা বেশ ভালো লাগলো। একে অপরের সাহায্যে এভাবে এগিয়ে আসা উচিত। তারপর ছোটদের থেকে একটু বড় একদল বাচ্চা মেয়ে পথ আগলিয়ে দাঁড়ালো। কি ব্যাপার আমার বিয়া অথচ আমারে ঢুকতে দিতেছে না! তারপর কিছুক্ষণ পর তাদের সঠিক বুঝ হওয়ার পর আমাকে মালা পড়িয়ে বরণ করে নিলো। এরপর বললো দেন এবার সালামি দেন। এখন বুঝলাম এই পিচ্চির দল কেন পথ আটকায়ছে। তারপর তারা আমাকে বৃদ্ধের মত দুই দিক থেকে দু’হাত ধরে ধরে দ্বিতীয় তলায় সিঁড়ি দিয়ে উপরে তুললো।
তারপর স্টেজে উঠলাম। ছোট একটা স্টেজ, তারপরেও দেখলাম কয়েক জন আমার হাত ধরে উপরে তুলে দিলো। আমি আবার তাদের এই অমায়িক আচরণ দেখে খুশি হলাম। স্টেজে বসলাম। সামনে অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে। আর আমিও উনাদের দিকে তাকিয়ে। সামনে দেখলাম আমার এক পাওনাদার বন্ধু। আমি তাৎক্ষনিক তার থেকে নিজের চোখ সরিয়ে নিলাম। মনে মনে একটু ভয় পেয়েছিলাম। শালা! আবার না স্টেজে উঠে পাওনা টাকা চেয়ে বসে। তারপর এবার আরেক পিচ্চিদের অন্য আরেকটা দল আসলো। আবার তাদের হাতে ফুলের মালা। আমি দেখে আশ্চর্য হলাম। আগের মালায় তো এখনো শেষ হয়নি আবার নতুন মালা লাগবে কেন? ওরা আমার মাথাটা নিচু করিয়ে মালাটা পড়িয়ে দিয়ে বললো, দেন আমাদের সেলামি দেন! এখন বুঝলাম হেরাও মালা দিতে আসছে কেন?
বিয়ে হবে এই খুশিতে দুইদিন ধরে তেমন কিছু খাই নাই বললেই চলে। এখন আমার পেটে অনেক ক্ষিধা। তো বসানো হলো বিশাল এক টেবিলে। সামনে আস্ত একটা মুরগি। তারপর দেখলাম ওই মুরগি থেকে সবাই ছিলে-ছুলে খাচ্ছে। আমারেও মাঝে মাঝে দিচ্ছে। তই আমার আস্ত মুরগি সবাই খাচ্ছে, বিয়ে বলে আমি শরমে কিচ্ছু কইতে পারি নাই। তারপর ক্যাটারিং বয়রা আসলো আমাকে হাত ধোয়াতে। আরে বাবা! এই হাত ধোয়েই আমি প্রতিদিন ভাত খাই, সেই হাত না ধোয়ায়ে আজকে তারা ছাড়বে না। আচ্ছা তো ধোয়াও এতোই যখন তোমাদের শখ! ওদের দেয়া হালকা গরম পানিতে হাত ডুবাইতে কাম সারছে! এরপর দেন দুলাভাই বকশিশ দেন? এখন আমি বুঝলাম, হেরা এতো কইরা আমারে হাত ধুয়াতেই চাইতেছিলো কেন?
তারপর নিজ বাসায় আসলাম। নিজ পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম অল্প কিছু টাকা অবশিষ্ট আছে। তাও মন্দ কি? কয়দিন মোবাইলে ফ্লেক্সিলোড করে চলা যাবে। এক রুমে আমারে বসানো হলো। তারপর এক সাদা মিষ্টি মনে হয় বিশ জনে মিলে আমারে খাওয়ায়ছে তারপরেও ওই মিষ্টি শেষ হয়নি!
লোক মুখে শুনছি। আমার জন্য একটা ফুল দিয়ে ঘর সাজাইছে। বাসরঘর। ওই ঘরে ঢুকতে গিয়ে আবার ধরা। ঘরের দরজায় লাল ফিতায় আটকানো। তারপর একদল বালিকা আসিলো। বললো আগে বকশিশ দেন তারপর ঢুকতে পারবেন। আমি এখন আবার বুঝলাম ওরা কেন আমার জন্য ঘর সাজাইছে। তারপর আমার হাতে একটা ভোঁতা কাঁচি দেয়া হলো ফিতা কাটার জন্য।
এরপর নতুন বউ আসলো আমারে সালাম করতে। সালাম করে মাথা সোজা করতেই সবাই বলতে লাগলো, “দাও মিয়া নতুন বউ সালাম করলে সেলামি দিতে হয়, সেলামি দাও”। শেষমেশ পকেট খালি করে যা ছিলো দিলাম। তারপর আমিও বুদ্ধি করে নতুন জামাই হিসেবে সালাম করতে যাবো এমন সময় মুরব্বিরা চিল্লায়া উঠলো, “আরে কি করো? কি করো? সামান্য কিছু টাকার জন্য তুমিও সালাম করবা মিয়া। মান-সম্মান কি আর কিছু থাকবো?”
সে এক শ্বাসরুদ্ধকর কাহিনী। অনেক আপন মানুষকে সে বিয়াতে দাওয়াত করতে পারিনি। প্রথম বিয়া হিসেবে নিজের অজান্তেই অনেক ভুলত্রুটি হয়ে গেছে। তাই বিয়া আরও করে সেসব বিষয় পুষিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা ছিলো।
কিন্তু না না! এই শ্বাসরুদ্ধকর কাহিনীর পর সিদ্ধান্ত আমার ফাইনাল। বিয়া আমি আর করতাম না!
— রাশেদুল হায়দার
৩০ জুন, ২০২০।
Best Bodda ??
শুভ বিবাহ বার্ষিকী। শুভ কামনা রইল আগামী দিনের পথ চলার। শুভেচ্ছা নিরন্তর।