অচিন পাখির প্রেম
“আজ কেমন যেন লাগছে
সব কিছু হঠাৎ করে ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে
বেড়িবাঁধে বসে-বসে ভাবছে পাভেল
আজ সুখের সব কেন্দ্রস্থল থেকে বিচ্ছুরিত হতে যাচ্ছি”
দূরে খেলার মাঠ আর নদীর দিকে তাকিয়ে,
“ইস! এই মাঠে বুঝি আর খেলা হবে না, খেলা শেষে দৌড় দিয়ে
বন্ধুদের সাথে নদীতে ঝাঁপ দেওয়া হবে না” ।
আজ সে নিজের সোনার গাঁ ছেড়ে বড় ভাইয়ের সাথে শহরে পাড়ি দিচ্ছে ।
তাইতো আগ থেকেই বন্ধুরা তাকে খেপাতো “আমাদের পাভেল উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যাচ্ছে”
পাঁচ-সাত জন পরিচিত লোকের শহরে অল্প কয়দিনে অনেক বন্ধুই জুটে গেল পাভেলের, সত্যিই অবাক সে । অল্প কয়দিনে ক্রিকেট ম্যাচেও জায়গা করে নিলো মিডিয়াম ফাস্ট বলার হিসেবে । একদিন-তো ম্যাচ জিতিয়ে ম্যাচ সেরাও হয়ে গেলো, ঐ দিন সন্ধায় বাসায় ফিরতে রাস্তার পাশের গাছের ডাল থেকে এক অদ্ভুত ডাক কানে এলো পাভেলের, সে থমকে দাঁড়ালো, একটু কাছে গিয়ে এদিকে ওদিকে তাকাতে চোঁখে পড়লো একটা সুন্দর পাখি, “আরে এতো সুন্দর পাখি এই শহুরে পরিবেশে”, পাখিটি দেখেও তার খুব মায়া হলো, বেশ সুন্দর পাখি, ময়না পাখি, সে দ্বিধায় পরে গেলো পাখিটি কি সাথে নিয়ে যাবে, নাকি রেখে যাবে, এই ভাবনার সময় অমনিই পাখিটিও আবার সেই অদ্ভুত ডাক দিলো, আর এই ডাকটাও যেন একটু ভিন্ন, যেন তাকেই ডাকছে, এবার আর ভাবা-ভাবি না করে পাখিটিকে তার সাথে করেই নিয়ে চললো ।
প্রথম রাতে কোন ভাবে পাখিটিকে লুকিয়ে রাখলো, আর সেও ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলো, কিভাবে রাখবে, কিবা খাওয়াবে, আবার সবাই জানলেও সমস্যা । যাই হোক আজ রাতটা যাক, সকালে চিন্তা করা যাবে । ঐ দিনের সকাল হলো ময়নার কিচির-মিচির আওয়াজে, এভাবে প্রথম কিছুদিন নিজের ঘরে লুকিয়ে রাখলেও পরে সব জানাজানি হয়ে গেলো । অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পাভেল পাখিকে তার নিজের ভাষা বুঝিয়ে দিলো আর পাখির ভাষাও কিছুটা রপ্ত করলো, এখন প্রতি সকালে পাখির ডাকে ঘুম থেকেই উঠেই পাখির দেখাশুনা, আবার কোথাও যাওয়ার সময়ে পাখি থেকে বিদায়, আর স্কুলেও বন্ধুদের সাথে শুধু পাখি বিষয়ক গল্প, আর ক্লাশের ফাঁকে ফাঁকেও শুধু পাখির জন্য চিন্তা, এখন একমাত্র বন্ধু আর খেলার সাথী এই পাখি, ‘ময়না’ । সারাদিনই যেন পাখিকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে ।
ময়নার দিকে খেয়াল করতে গিয়ে পড়াশুনা সহ সবার থেকেও সে যেন আলাদা হয়ে যাচ্ছে, আর অন্য সবকিছুতেই তার উদাসীন ভাব। অন্যদিকে এতসব পাগলামি দেখে তার মা-ভাইয়েরা তার উপরে ভীষণ ক্ষিপ্ত, তারা কেন জানি ঐ ময়নার প্রতি হিংসে করতে লাগলো, মনে হচ্ছে এই পাখি এসেই তাদের ভালোবাসার উপর ভাগ বসালো । পাভেল এটাও বুঝে যে, তার অন্যদের উপরেও দায়িত্ব আছে কিন্তু সে সব কিছু বুঝেও না বোঝার মতোকরে চলতে লাগলো, যেন সে ময়নার প্রেমে পড়েছে । আর এই প্রেম মানুষের প্রেমের মতোই অন্ধ করে দিয়েছে পাভেলকে । দিন দিন ময়নার প্রতি তার ভালোবাসা যেন বেড়েই চলছে । পাখিটি তার এতই আদুরে ছিলো যে, সে কখনো খাঁচায় বন্দী করে রাখেনি । ময়নাও সারাদিন ঘুরতো ফিরতো আর ঠিক ঠিক সন্ধ্যায় বাসায় ফিরতো ।
একদিন সকাল থেকে আঁকাশটা মেঘে গুমোট বেঁধে ছিলো, বৃষ্টি হবে হবে ভাব, পরে ঝড়ো হাওয়া সহ বৃষ্টি এলো, সেদিন বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হলো কিন্তু ময়না তার নীড়ে ফিরে এলো না । পাভেল সবদিকে পাখির খোঁজে পাগল প্রায়, তার উদ্বিগ্নতা দেখে পরিবারের বাকীরাও ঘাবড়ে গেলো, পাভেল ঐদিন অনেক রাত পর্যন্ত খুঁজলো, পরদিন সকালেও বের হলো, এ-জায়গা ও-জায়গা সবত্রই খুঁজলো, এইভাবে একদিন দুইদিন করে মাস-বছর গেলো তাও সে খোঁজে তার ময়না পাখিটিকে, কোথাও কোন পাখি দেখলেই সে ময়নার সাথে মিলিয়ে দেখে কিন্তু আসল ময়নাকে আর সে খুঁজে পায় না । আদৌও সে পাবেনা জেনেও খোঁজে । ময়না এসে তাকে যে সুখ দিলো, হারিয়ে যেন তার চেয়ে বেশি দু:খ দিয়ে গেলো । হয়তো এই ময়নার খোঁজ আর কোনদিনও মিলবেনা কিন্তু ময়নার প্রতি ভালোবাসা আর প্রেম তার সারাজীবন ব্যাথার স্মৃতি হয়ে থাকবে।
Leave a Reply