নতুন অফিস হাল-চিত্র!!!

অফিস সকাল ৮.৩০। এলার্ম দেয়া ৭ টায়।
ফজরের পর ওই এলার্ম কেটে ৭.৩০ করে দিলাম ।
এলার্ম বেজে উঠার পর একরাশ বিরক্তির সহিত এলার্ম বদ্ধ করে ভাবলাম আরও ১৫ মিনিট ঘুমিয়ে নিই। পরে হঠাৎ আঁতকে উঠে ঘড়ি দেখলাম ১৫ মিনিটের জায়গায় ১ ঘণ্টা হয়ে গেছে।
টয়লেটে গিয়ে গালে হাত দিয়ে আরও ১৫ মিনিট ঘুমিয়ে নিলাম।

বেসিনে ট্রুথ ব্রাশে খুব সতর্কতার সহিত পেস্ট লাগালাম। ট্রুথ পেস্টের পরিবর্তে স্যাভলন ক্রিম দিয়ে ব্রাশ করার ইতিহাস পৃথিবীতে অনেক আছে। এক হাত পিছনে দিয়ে ঘুম ঘুম ঝাপসা চোখে আয়নার দিকে তাকিয়ে ব্রাশ করছি তো করছি। ঠিক কতক্ষণ ব্রাশ করেছি মনে নেই।
তারপর সকালের খাওয়া সেরে দুধ চিনি বেশি দিয়ে কড়া লিকারের এক কাপ জম্পেশ চা।
অফিসের জন্য রেডি হয়ে মোজা খোঁজতে আরও ১৫ মিনিট সময় ব্যয় হলো।
লোকাল বাসের হ্যান্ডেল ধরে ঝুঁলে ঝুঁলে ইন করা শার্ট আর পলিস করা জোতার তেরোটা বাজিয়ে বাস থেকে নামলাম।
ডানে বামে তাকিয়ে অফিসে ঢুকেই লম্বা একটা সালাম দিয়ে, ন্যাকড়া দিয়ে টেবিল চেয়ার মুছে অফিস শুরু করলাম।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। অফিস শুরু হলো।
দিনের প্রথম বারের মত ফেসবুকের নোটিফিকেশনগুলো চেক করে নিলাম। কয়েকজনের আনসিন ম্যাসেজগুলোর আনসার করে ওয়াশরুম থেকে চোখে মুখে এক ঝাপটা পানি ছিটিয়ে ঠিক এক ঘণ্টা পর কয়েক জনকে নিয়ে নাস্তার বিরতি।
ঘুরে ফিরে আসতে না আসতেই কাঁটায় কাঁটায় নামাজের টাইম।
প্যান্টের বেল্টকে একটু লুজ করে মুরগির রানের সাথে ফ্রি ডাল দিয়ে দুপুরে খাওয়ার সারা হলো। খাবার সেরে চেয়ারে বসতে না বসতেই তাৎক্ষণিক ভাবেই কোল্ড ড্রিংকসের কয়েকটা ঢেঁকুর।
এর মধ্যে পূবালী বাতাসে ঘুমে চোখ একবারে টলোমলো। ঘুম আর ঘুম, দু’চোখে আর কিছু দেখছিনা। কোন প্রকারেই ঘুমকে কন্ট্রোল করা যাচ্ছেনা।
৩০ মিনিট এইভাবে চললো। অপেক্ষা করলাম, ধৈর্য ধরলাম। তারপর আরও ১৫ মিনিট… আরও ১৫ মিনিট। তারপরেও আমি অফিসেই বসা ছিলাম। ঘুমের সাথে এত যুদ্ধের পরেও আমি অফিস ছাড়িনি। ঘুমের শেষ না দেখা পর্যন্ত উঠছিনা।
না, এভাবে অফিস করার ছেয়ে না করাই ভালো। বসা থেকে উঠলাম। আবারও ডানে বামে তাকিয়ে অফিস থেকে বের হলাম। কি আজব! ঘুমের ঘোরে কখনযে বাসে উঠে বাসায় চলে আসলাম খেয়ালই করি নাই।
বাসায় এসে ইন করা শার্ট আর মোজা সহই ঘুমাতে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। ঘুম আই, ঘুম আই…! তখন থেকেই চেষ্টা চালাচ্ছি এখন পর্যন্ত আর ঘুম আসেনি। হায়রে ঘুম যা দেখাইলি…..!

(নতুন অফিস বলে এখনো তেমন কাজ দেয়া হয়নি। তাই বলে মনে করবেননা আমার কোন কাজ নেই। কাজ করা শুরু হলে আর হুঁশ থাকবে বলে মনে হয়না। অন্যকোন ভাবে না নেওয়ার অনুরোধ রইল। ধন্যবাদ সকলকে আজাইরা প্যাঁচাল শোনার জন্য।)

–রাশেদুল হায়দার
২৪মে, ২০১৭ ইং।

বি.দ্র: এটা প্রথম দিকের অফিসের কথা পরে এমন এমন ব্যস্ত হয়েছি যে, সম্পূর্ণ এটার উল্টো চিত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Recent Post

শুভ জন্মদিন ২০২২

আজ আমার তেত্রিশ মতান্তরে পঁয়ত্রিশতম শুভ জন্মদিন! (বয়সে করোনাকালিন হিসেব বাদ দেয়া হয়েছে) ছবিটি আনুমানিক ২০ বছর আগের হারিকেন জমানার। ছত্রিশ ফিল্মের কোডাক ক্যামেরার। মেঘে মেঘে বয়স তো আর কম হলো না। সেই ১৫ টাকা সের চাল সময়কার ছেলে আমি। ৪০ টাকা নিয়ে বাজারে যেতাম। এর মধ্যে মাছ-তরকারি, মুদি সদায় সহ দুই টাকা বাঁচিয়ে .....

বই: প্রোডাক্টিভ মুসলিম

বইটি পড়ে কিছু ব্যাপারে আচার্য হয়েছি। বইটি হাতে নিয়ে পড়ার আগে মনে করেছিলাম, এর ভিতরে লেখা থাকবে শুধু কাজ আর কাজ। কিসের ঘুম, কিসের বিশ্রাম আর কিসের অবসর। হয়তো বলা থাকবে, এই দুনিয়াতে কি শুধু ঘুমাতে আসছেন। শুধু কাজ করেন আর অন্য কিছু নয়। পরবর্তীতে ঘুমের উপর চ্যাপ্টার পড়ে আরও বেশি আচার্য হয়েছি যে, .....

বই: ইন দ্য হ্যান্ড অব তা-লে-বা-ন

১১ সেপ্টেম্বর, ২০০১। মঙ্গলবার। নিউইয়র্ক-বাসীর সকালটা শুরু হয় অন্যান্য দিনের মত! সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা নিউইয়র্কের লোকজন খুব সকালে উঠে যার যার অফিস শুরু করেছে। প্রতিদিনকার সকালের মত হয়তো কেউ কেউ চা-কপি দিয়ে মাত্র অফিস ডেক্সে ওইদিনের মত নিজেকে সেট করে নিচ্ছে। পৃথিবীকে নাড়া দিতে যাচ্ছে এমন কোন ঘটনা ঘটতে চলেছে তখনও এই .....

বই: ফজর আর করব না কাজা!

আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম! মাত্র ফজরের আজান হয়েছে। সামনের বাসার আঙ্কেলের বড় গেটের তালা খোলার খটখট আওয়াজ। তারপর আমার মোবাইলের এক নাম্বার এলার্ম ভেজে উঠলো। একরাশ বিরক্তিসহ এলার্ম বন্ধ করলাম। এই আলতো ঘুমের এমন ঝনঝন তালা খোলার শব্দ আর এলার্মের এমন ভিট-ঘুটে আওয়াজ সত্যিই বিরক্তিকর ছিলো। তারপর কোন রকম উঠে দায়সারা ভাবে নামাজ ঘরে .....

বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ রিভিউ: এ আমি কি দেখলাম?

অফিস থেকে মনে হয় একটু তাড়াহুড়া করেই বের হয়েছি। আজকে বাংলাদেশের চির প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার সাথে খেলা। কয়দিন আগেও এই অস্ট্রেলিয়াকে মিরপুরের মাঠে আমরা কচুকাটা করেছি। সেই হিসেব মতে আজ একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই উপভোগ করবো। টানটান উত্তেজনা থাকবে। বাংলাদেশ হাড় কাঁপানো ব্যাটিং করবে। মাঠ কাঁপানো ফিল্ডিং করবে। টানটান করে বাউন্ডারি হাঁকাবে। দর্শক সাড়ি থেকে বাংলাদেশ! .....

নাফাখুম জলপ্রপাত – নেটওয়ার্কের বাইরে একদিন

আজকে যাবো। কালকে যাবো। এই বর্ষায় যাবো। এমন করতে করতে এক ট্যুরের প্ল্যান চলে প্রায় দুই বছর ধরে। এর মধ্যে করোনা। লকডাউন। শাটডাউন। মাস্ক। স্যানিটাইজার ইত্যাদি ইত্যাদি পৃথিবীতে নতুন করে আগমন করেছে। অন্যদিকে নাই হয়ে গেছে অনেক পরিচিত মানুষ, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-অনাত্মীয়। প্রতি বছর একটা জংলী ট্যুর দেয়ার ইচ্ছে থাকে। বড়সড় একটু গ্রুপ করে কোন .....

All Post