আমার বন্ধু সোহাগ
আমার সাথে সম্পর্ক সতিন টাইপের। ৫ মিনিটের আড্ডায় ৩ মিনিট ঝগড়া আর ২ মিনিট মারামারি।সোহাগ দেখতে আমার থেকে একটু ফর্সা তবে সাইজে আমার থেকে কমপক্ষে এক ইঞ্চি ছোট। এটা নিয়ে আমার গর্বের শেষ নেই কারণ অন্তত পৃথিবীর একজন মানুষ আছে যার থেকে আমি লম্বা।
সোহাগ হলো আমার বাংলাদেশ ব্যাংক। একদিন ওকে বললাম, শোন সোহাগ, তুমি বন্ধু হিসেবে অনেক অনেক ভালো এবং একজন আদর্শ বন্ধুর সকল গুণাবলি তোমার মধ্যে আছে। সে শুধু উত্তরে বললো, তোমার এখন কত টাকা লাগবে? এক মাসের ফেরত দেয়ার কথা বলে সেই যে নিয়েছি এক বছর হলো এখনো দেয়ার নাম গন্ধ নেই।
আরেকদিন বললাম, তোমার শার্টটি অনেক সুন্দর। সে বললো, যাও এটা তোমাকে গিফট করে দিলাম। পরের দুই তিন মাসে এমনি করে তার থেকে আরও একটি শার্ট, একটি প্যান্ট নিয়েছি। নিয়েছি বলা ঠিক না, সে গিফট দিয়েছে। তার প্যান্ট পরার পর ওকে বললাম, তোমার গিফট দেয়া প্যান্টে আমার বেল্ট দিয়ে হয়না। ও বললো, তাহলে আমার বেল্ট পরো। আরও একটা পাঞ্জাবি নিতে নিতেও নিই নাই, কারণ ওই পাঞ্জাবি তার শ্বশুর বাড়ি থেকে ওকে গিফট দেয়েছিলো। সে যা দেয় সব হাসি মুখে দেয়, নিতে তো সমস্যা নেই। আবার না নিলে যদি মনে কষ্ট পায়, সেটা ভেবে নিই আরকি! হাজার হোক না নিয়ে বন্ধুর মনে কষ্ট দেয়া তো ঠিক না। তাই না?
আমাদের মধ্যে ভালোবাসা-বাসিরও অভাব নাই। যেমন, সোহাগ বললো, বন্ধু তোমার জন্য আমি সব করতে পারি। এমনকি জান পর্যন্তও দিতে পারি। আমি বললাম, ওরে বাপরে! জান দেয়া লাগবে না। আপাতত একটা ডিম পোজ করে নিয়ে আসো।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি হওয়ার পর আমি তার বাসায় কয়েক মাসের জন্য বিনাশ্রমে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এসব তখনকার ঘটনা।
পাঁচ/ছয় মাস পর তারও সরকারী চাকুরী হলো। সে বাসা ছেড়ে জামালপুর চলে যাবে। আমি তাকে শুধু বললাম, এত কিছু কিভাবে নিবে? খাট, চেয়ার, টেবিল, হাঁড়ি-পাতিল এতকিছু। নিতে মিনিমাম একটা ট্রাক লাগবে। অনেক ঝক্কি ঝামেলা হবে, ঠিক না? সে বললো, ঠিক ঠিক। কিভাবে যে নিই এতসব। যাও এসব তোমাকে আল্লাহর ওয়াস্তে দান করে গেলাম।
তারপর থেকে তার সব জিনিস পত্র সহ সে বাসার চাবি আমার কাছে। প্রতি মাসে বাসা ভাড়া অবশ্য আমি দিই। তার খাটে শোয়ে, তার চেয়ারে বসে, তার রেখে যাওয়া প্লেটে ভাত খেতে সব সময় তার কথা মনে পরে। সোহাগ বন্ধু তুমি কোথায়?
মজা করে হোক আর সিরিয়াসলি হোক সে মাঝে মাঝে বলে তুমি মিয়া সুই হয়ে আমার ঘরে ঢুকে ফাল হয়ে বের হয়েছো। আমার সাজানো সংসার তুমি দখল করে নিয়েছো। আমি শুধু হাসি। কারণ ঘটনা সত্য।
বন্ধু সোহাগ কিছুদিন আগে পুত্র সন্তানের জনক হয়েছে। বন্ধুর জন্য অভিনন্দন আর ভালোবাসা। তার সন্তানের জন্য রইল স্নেহপ্রিত ভালোবাসা আর দোয়া।
আল্লাহ বন্ধুকে সব দানের বিনিময়ে উত্তম প্রতিদান দিক। আমিন।
Leave a Reply