এটা দুর্ঘটনা না, এটা হত্যা!!
কি মর্মান্তিক! কি মর্মান্তিক!
মানুষকি এমনও হয়? এমন নির্দয়, নির্মম আর বর্বর হয়। ওরা কি ছোট বেলায় মায়ের আদর পায়নি। পরিবারের ভালোবাসা পায়নি। ওদের কি স্ত্রী-সন্তানাদি পরিবার-পরিজন নেই? ওরা কি বুঝেনা সন্তানের প্রতি আদর স্নেহ মমত্ববোধ আর অন্তরের টানের কথা। বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসার কথা।
সারা জীবন দেখে এসেছি দুর্ঘটনা কবলিত কাউকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে। তার পরিবার পরিজনের সাথে যোগাযোগ করতে। তাকে শুশ্রুষা দেয়ার জন্য উদ্বেগজনিত হতে। নিজ পকেটের টাকা খরচ করে অপরিচিত একজনকে বাঁচাতে ঔষধ কিনতে। তার মানি ব্যাগ, মোবাইল হেফাজত করে তাকে বা তার পরিবারকে বুঝিয়ে দিতে।
অথচ হানিফ পরিবহনের বাসের চালক, চালকের সহকারী ও সুপারভাইজার এ কি করলেন? বাসের ধাক্কায় সামান্য আঘাতের দোষ ঢাকতে তারা জীবিত অবস্থায় পায়েলকে ব্রিজ থেকে নদীতে ফেলে দেয়। এতে পায়েলের মৃত্যু হয়ে লাস ভেসে উঠে আরেক জায়গায়। এ কেমন নির্মম কাজ। এমন বর্বর কাজও কি মানুষ করতে পারে? এমন প্রশ্ন যেকোনো স্বাভাবিক বিবেকবোধ মানুষকে নাড়া দিবে। ওই বাসের চালক, চালকের সহকারী এবং সুপারভাইজাররা কখনো কি কোন দুর্ঘটনায় পরতে পারেনা? তাদের প্রতি কি রাস্তার কোন মানুষ এমন আচরণ করবেন? তারা কেন এমন করলেন? তাদের মন-মস্তিষ্ক কি গাড়ির ইঞ্জিনের মত বিকল হয়ে গিয়েছিলো নাকি পরিচর্যার অভাবে তাদের মনে আর বিবেকে মরিচা ধরেছিলো। তা না হলে এমন ঘৃণিত কাজ তারা করতে পারলো কিভাবে।
পায়েল আর তার মায়ের কাছে ফিরে যাবেনা। ঢাকায় পৌঁছে আর ফোনে মাকে বলবেনা, মা আমি নিরাপদে ঢাকাতে পৌঁছেছি। মায়ের অন্তরের খাঁ খাঁ শূন্যতা পূরণের আর কোন বিকল্প নেই। মায়ের স্বপ্নের যে মৃত্যু হলো এটা মা কিভাবে ভুলবে? পায়েলের মা ছেলের যে মায়া মাখা চেহারা দেখে তাকে বিদায় দিয়েছিলেন সে চেহারাই তো পায়েল ঘরে ফেরেনি,ফিরেছে বিকৃত লাশ হয়ে।
পায়েলকে যারা অমানবিক আচরণ করে মেরেছে সেরকম মানুষের এই সমাজে অভাব নেই। এই মানুষগুলোর কি কখনো বিচার হবেনা? বারবার তারা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় আইনের ফাঁক-ফোকরে বেঁচে ফিরে। আর বারবার এমন ঘটনার জম্মদেয়। আমরা এইসব পিশাচের বিচার চাই। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যাতে আর কেউ এমন নির্মম কাজ করার সাহস না পায়।
এই পায়েলই আমার স্কুল বন্ধু পলাশের ছোট ভাই। এটা আমি জেনেছি দুর্ঘটনার অনেক পরে। বন্ধুর সাথে দেখা নেই কথা নেই সেই ১৫-১৬ বছর। হঠাৎ বন্ধুর কথা এই রকম একটা ঘটনা দিয়ে মনে পরবে তা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং ভাবনার অতীত ছিলো।
বন্ধু ও তার পরিবারের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করছি যাতে আল্লাহ তাদেরকে এই শোক সহ্য করার শক্তি দেন, ধৈর্য ধরার তৌফিক দেন এবং পায়েলকে জান্নাতবাসী করেন। আমিন।
© রাশেদুল হায়দার
২৭ জুলাই, ২০১৮।
Leave a Reply