পেঁয়াজ নট আউট ২০০!!
পেঁয়াজের শোকে ঘুম আসে না, একলা জেগে রই…
মাগো আমার সর্ষে বাটা ইলিশ মামা কই!
ইলিশ মামা বেড়াতে গিয়েছে পাশের গ্রামে। মামা একলা বিমানে ফেরত এসেছে, মামি আসেনি।
স্বর্ণের চালানের মতো এয়ারপোর্টে লাগেজভর্তি পেঁয়াজ ধরা পড়ছে। পেঁয়াজের দাম এখন স্বর্ণের থেকেও কোনো অংশে কম নয়। সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার হলো, পেঁয়াজের চেয়ে আপেলের দাম কম। তাই বাসাবাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার সময় আপেলের পরিবর্তে পেঁয়াজ নিতে উত্সাহিত করা হচ্ছে। ডিমের মতো হালিতে এবং মিষ্টি কুমড়ার মতো ফালিতে পেঁয়াজ কেনার নিত্যনতুন অফার দিচ্ছে সুপার শপগুলো। গ্রাহকের মোবাইলে এখন মেসেজ আসে, ১ হাজার টাকার বাজার করলে পেঁয়াজ ১০% ডিসকাউন্টে।
মুশফিকুর রহিম ডাবল সেঞ্চুরি করে যেমন সম্মানিত হয়েছেন, পেঁয়াজ অপরাজিত ডাবল সেঞ্চুরি করে মুশফিকুর রহিমকেও সম্মানের দিক দিয়ে ছাড়িয়ে গেছেন। পেঁয়াজ নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে বারাক ওবামা পর্যন্ত সবাই সমানভাবে চিন্তিত।
কিছু ব্যাচেলর ছেলেপুলে পেঁয়াজের দাম না কমা পর্যন্ত বিয়াশাদি করবে না বলে পণ করেছেন। অবিবাহিত বালিকার বাবারা পেঁয়াজ কিনতে সামর্থ্য রাখেন, এমন বালেক ছেলেদের বিয়ের জন্য পছন্দ করছেন। বিয়ের সময় বর-কনের পেঁয়াজ খচিত আংটি বদলও দেখা গেছে।
এই পেঁয়াজের সাম্রাজ্যে শুধুই পেঁয়াজেরই দাম আছে, এই সাম্রাজ্যে রসুনের মতো গরিবদের কোনো দাম নেই।
দিনদিন পেঁয়াজের কাছে ছোট হয়ে যাচ্ছে গৃহকর্তা স্বামীরা। নামীদামি পেঁয়াজের সঙ্গে নিজেদের তুলনা শুনতে শুনতে লজ্জায় স্বামীর মাথা কাটা যাচ্ছে। ঘরের বউ বলছে কাতান শাড়ি তো আর কিনে দিতে বলিনি, এক কেজি পেঁয়াজ কিনে দিতে বলেছি। পেঁয়াজের দুনিয়ায় গরু, খাসি, দেশি মুরগি—সব যেন পেঁয়াজের ঝাঁজে কাঁদছে। পাকিস্তানি মুরগির সঙ্গে ভারতীয় পেঁয়াজের বহুকালের সম্পর্কে চিড় ধরেছে।
আজ আকাশে বাতাসে এ যেন এক হতাশার ধোঁয়া। আকাশের নীল রঙের সঙ্গে আজ পেঁয়াজ যেন এক রক্তিম চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে জিততে হবে। পেঁয়াজের সঙ্গে হার মানা চলবে না, চলবে না…।
লেখাটি ২০১৯ সালের ০৮ই ডিসেম্বর দৈনিক ইত্তেফাকের ফিচার পাতা ঠাট্টায় প্রকাশিত।