চিলড্রেন অব হ্যাভেন || Children of Heaven

এটা আমার দেখা সেরা এক ইমোশনাল মুভি। শুধু সেরা না, সেরাদেরও সেরা।
যেটা দেখেছি ২০০৫ সালে। আজ ১৫ বছর পর রিভিউ লিখছি। মনে কতটুকু দাগ কাটলে এত বছর ধরে ছবির দৃশ্যগুলো বয়ে বেড়ানো যায়?
 
দরিদ্র পরিবার। বাবা অল্প আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। মা বিছানায় পড়ে থাকা অসুস্থ। খুব কষ্ট-সৃষ্টে পরিবার চলে। কয়েক মাসের বাড়ি ভাড়া, মুদি দোকানের বকেয়া দিতে হিমশিম খাওয়া এক পরিবারের ছেলে-মেয়ে আলী আর জারা। এর চেয়ে গরিবি হাল আর কি হতে পারে? তারপরেও যেন কি সুন্দর পরিবার।
ছবিতে তৎকালীন ইরানের সাধারণ মানুষের কৃষ্টি-কালচার উঠে এসেছে। পরিবার, পারিবারিক বন্ধন সহ ভাই-বোনের মমত্বের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই ছবি।
আপনাদের হয়তো বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে মাত্র এক জোড়া জুতা নিয়ে এই ছবি! ভাবা যায়?
 
আলী: জারা, একটা ভালো খবর আছে।
জারা : কি খবর?
আলী: আমি দৌড় প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত হয়েছি।
জারা : কি ধরনের দৌড় প্রতিযোগিতা?
আলী: অনেক লম্বা পথের। থার্ড যে হবে তার জন্য এক জোড়া জুতা।
জারা : থার্ড কেন?
আলী: প্রথম এবং দ্বিতীয় পুরষ্কার অন্য কিছু। আমি যদি থার্ড হয়, আমি তোমাকে সে জুতা দিয়ে দিবো।
জারা : কিন্তু সে জুতা তো ছেলেদের।
আলী: আমি মেয়েদের জুতার সাথে পরিবর্তন করে নিবো।
জারা : যদি তুমি থার্ড না হও।
আলী: আমি অবশ্যই থার্ড হবো।
 
এই হলো আলী আর জারার ছোট্ট এক কথোপকথন।
 
একটা বোকা ছেলে যে দৌড় প্রতিযোগিতায় ফার্স্ট হতে চায় না। হতে চায়, থার্ড! এর চেয়ে অবাক করা আর কি হতে হারে! থার্ড পুরষ্কার হিসেবে আছে এক জোড়া জুতা। তার ছোট বোনের জুতা সে হারিয়ে ফেলছিলো। আর আলী এখন সে জুতা ছোট বোনকে ফেরত দিতে সে থার্ড হতে চায়।
 
আলী যতক্ষণ ধরে ম্যারাথন দৌড় শেষ করতে পারছিলো না, ততক্ষণ পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছিলাম না! মনে মনে কামনা করছিলাম আলী যাতে অবশ্যই থার্ড হয়।
কোন থ্রিলার মুভি থেকে কম নয়। আসলে অন্য কোন মুভির সাথে এর তুলনা করাটায় অনেকটা বেমানান।
 
আলী দৌড় প্রতিযোগিতা শেষ করেছে। বাড়ির উঠোনে পানির ফোয়ারায় পা ভিজিয়ে বসে আসে। গোল্ড ফিশ তার পায়ে এসে বসেছে। অন্যদিকে আমার চোখের পানি আলির ভালোবাসার কাছে হার মেনেছে! মনের অজান্তেই ভাই-বোনের এই মমত্বের উষ্ণ পানি গড়িয়ে পড়লো। আহারে! ছবিও মানুষকে কাঁদায়, ভাবায়!
 
তো দেখে ফেলুন। প্রথমবার একা দেখুন। পরবর্তীতে পরিবার সহ। নিজেকে একবার পরীক্ষায় ফেলুন। আপনার চোখের পানি টলটলে নাকী বায়ুমণ্ডলীয় ধাতব পদার্থের মত ভারি!

Comments are closed.

Recent Post

শুভ জন্মদিন ২০২২

আজ আমার তেত্রিশ মতান্তরে পঁয়ত্রিশতম শুভ জন্মদিন! (বয়সে করোনাকালিন হিসেব বাদ দেয়া হয়েছে) ছবিটি আনুমানিক ২০ বছর আগের হারিকেন জমানার। ছত্রিশ ফিল্মের কোডাক ক্যামেরার। মেঘে মেঘে বয়স তো আর কম হলো না। সেই ১৫ টাকা সের চাল সময়কার ছেলে আমি। ৪০ টাকা নিয়ে বাজারে যেতাম। এর মধ্যে মাছ-তরকারি, মুদি সদায় সহ দুই টাকা বাঁচিয়ে .....

বই: প্রোডাক্টিভ মুসলিম

বইটি পড়ে কিছু ব্যাপারে আচার্য হয়েছি। বইটি হাতে নিয়ে পড়ার আগে মনে করেছিলাম, এর ভিতরে লেখা থাকবে শুধু কাজ আর কাজ। কিসের ঘুম, কিসের বিশ্রাম আর কিসের অবসর। হয়তো বলা থাকবে, এই দুনিয়াতে কি শুধু ঘুমাতে আসছেন। শুধু কাজ করেন আর অন্য কিছু নয়। পরবর্তীতে ঘুমের উপর চ্যাপ্টার পড়ে আরও বেশি আচার্য হয়েছি যে, .....

বই: ইন দ্য হ্যান্ড অব তা-লে-বা-ন

১১ সেপ্টেম্বর, ২০০১। মঙ্গলবার। নিউইয়র্ক-বাসীর সকালটা শুরু হয় অন্যান্য দিনের মত! সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা নিউইয়র্কের লোকজন খুব সকালে উঠে যার যার অফিস শুরু করেছে। প্রতিদিনকার সকালের মত হয়তো কেউ কেউ চা-কপি দিয়ে মাত্র অফিস ডেক্সে ওইদিনের মত নিজেকে সেট করে নিচ্ছে। পৃথিবীকে নাড়া দিতে যাচ্ছে এমন কোন ঘটনা ঘটতে চলেছে তখনও এই .....

বই: ফজর আর করব না কাজা!

আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম! মাত্র ফজরের আজান হয়েছে। সামনের বাসার আঙ্কেলের বড় গেটের তালা খোলার খটখট আওয়াজ। তারপর আমার মোবাইলের এক নাম্বার এলার্ম ভেজে উঠলো। একরাশ বিরক্তিসহ এলার্ম বন্ধ করলাম। এই আলতো ঘুমের এমন ঝনঝন তালা খোলার শব্দ আর এলার্মের এমন ভিট-ঘুটে আওয়াজ সত্যিই বিরক্তিকর ছিলো। তারপর কোন রকম উঠে দায়সারা ভাবে নামাজ ঘরে .....

বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ রিভিউ: এ আমি কি দেখলাম?

অফিস থেকে মনে হয় একটু তাড়াহুড়া করেই বের হয়েছি। আজকে বাংলাদেশের চির প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার সাথে খেলা। কয়দিন আগেও এই অস্ট্রেলিয়াকে মিরপুরের মাঠে আমরা কচুকাটা করেছি। সেই হিসেব মতে আজ একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই উপভোগ করবো। টানটান উত্তেজনা থাকবে। বাংলাদেশ হাড় কাঁপানো ব্যাটিং করবে। মাঠ কাঁপানো ফিল্ডিং করবে। টানটান করে বাউন্ডারি হাঁকাবে। দর্শক সাড়ি থেকে বাংলাদেশ! .....

নাফাখুম জলপ্রপাত – নেটওয়ার্কের বাইরে একদিন

আজকে যাবো। কালকে যাবো। এই বর্ষায় যাবো। এমন করতে করতে এক ট্যুরের প্ল্যান চলে প্রায় দুই বছর ধরে। এর মধ্যে করোনা। লকডাউন। শাটডাউন। মাস্ক। স্যানিটাইজার ইত্যাদি ইত্যাদি পৃথিবীতে নতুন করে আগমন করেছে। অন্যদিকে নাই হয়ে গেছে অনেক পরিচিত মানুষ, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-অনাত্মীয়। প্রতি বছর একটা জংলী ট্যুর দেয়ার ইচ্ছে থাকে। বড়সড় একটু গ্রুপ করে কোন .....

All Post