ক্লাস থ্রি ফেল!!

পরীক্ষার ভয়, আম্মার মাইর আর স্কুলের দুই টাকা!!

ছোট বেলাতে না পড়লে পরীক্ষায় ফেল করবো এই ভয়ে কখনো পড়াশুনা করিনি। পড়েছি আম্মার ভয়ে আর স্কুল গিয়েছি আম্মার থেকে দুই টাকা পেতে।

ক্লাস থ্রিতে আমি বার্ষিক পরীক্ষায় এক বিষয়ে ফেল মারছিলাম। তারপরেও আমার রোল ছিল এক। হা হা এটা হাস্যকর, এটা হাস্যকর। প্লিজ আগেই হাসবেন না। আগে ঘটনা শুনুন। এটা সত্য যে এক বিষয় ফেল করার পরও আমার রোল এক ছিল। কারণ বাকী ছাত্ররা আমার থেকেও বেশি বিষয়ে ফেল মারছিল। হা হা…!

প্রতিদিন পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে বাঁশ ঝাড়ে বসে প্রশ্ন দাগিয়ে নিতাম কোন কোন প্রশ্ন আনসার করেছি। কিন্তু বাড়ি যাওয়ার পর বড় ভাই দেখল যে আমি ১০টার মধ্যে ১০টায় টিক মেরে রেখেছি, অলটারনেটিভ সহ। পরীক্ষা কেমন হলো এতেই বুঝা যায়।

পরিবার থেকে সেদিন আমাকে আবার ক্লাস থ্রিতে রেখে দেয়ার জন্য স্কুলে বলা হয়। কিন্তু স্কুলের হেড স্যার পড়লো এক বিপাকে! রোল এক-ই যদি ক্লাস ফোরে না উঠে কেমনে কি? লে হালুয়া..!

আমার মুখস্থ বিদ্যা একদম ছিল না অথবা আমার মুখস্ত করতে ভালো লাগতো না! কখনো কবিতার নবম লাইন মুখস্থ করিনি। পরীক্ষায় যে ৮ লাইন আসত সে ৮ লাইনই মুখস্থ করতাম। আমার সৃজনশীল জ্ঞান সেই মুখস্থ না করার মাধ্যমেই সৃষ্টি হয়েছিল। যেমন একবার সমাজ পরীক্ষায় ছোট পরিবার-যৌথ পরিবারের পরিচয় এবং এর উপকারিতা অপকারিতা আসছিল। আমি তো আর মুখস্থ করিনি তাই বানিয়ে লেখা শুরু করলাম। যৌথ পরিবারের পরিচয় দিতে গিয়ে আমাদের ৭ ভাই বোনের নাম এমনকি আমার দাদি আজমালা খাতুনের নামও উল্লেখ করেছি। এবং ছোট পরিবারের অপকারিতা হিসেব লিখেছিলাম, ছোট পরিবারের কোন ছেলে-পুলে যৌথ পরিবারের কারও সাথে মারামারি লাগলে তারা শুধু মার খায় আর কান্নাকাটি করে। কারণ যৌথ পরিবারের মানুষ বেশি, শক্তি বেশি।

এসব সৃজনশীলতা হয়তো তখনকার স্যাররা বুঝত না অথবা তখনকার সময় প্রচলন ছিল না তাই হয়তো ক্লাস থ্রি তে সামাজিক বিজ্ঞানে ফেল মারছিলাম।

বানিয়ে লেখার ক্ষেত্রে গণিত বিষয়টাকে পর্যন্ত আমি ছাড় দিই নাই। পিতা-পুত্রের বয়সের অংক আমার কাছে ছিল পান্তা ভাতের মত সহজ। এসব অংকে যোগ-বিয়োগ, গুণ-ভাগ ছাড়া আর কিছুই ছিল না। তো নিজের মত করে বানিয়ে বানিয়ে যোগ-বিয়োগ, গুণ-ভাগ দিয়ে অংক করে যাচ্ছি শেষ পর্যন্ত অংকের রেজাল্ট যেটা আসল সেটা আজ পর্যন্ত আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। অংকের শেষ রেজাল্টে পুত্রের বয়স পিতার বয়স থেকে ১৫ বছর বেশি।
এটা কেমনে সম্ভব মফিজ! এ মফিজ ইজ কট বাই আরেক মফিজ! তাই হয়ত ফেল!

এরপর সিরাজউদ্দৌলার কাহিনীতে পেট মোটা প্যাঁচুক ঘষেটি বেগম আর হারামজাদা মীর জাফর নিয়ে যা লিখছি, সে লেখা স্বয়ং সিরাজউদ্দৌলা পর্যন্ত বিশ্বাস করবে না।

ছোট বেলাতে এই পরীক্ষার ভয়ে এমন এক রাজার দেশ কল্পনা করতাম যে দেশের রাজা নিজেও থাকবে অশিক্ষিত আর সে দেশে কোন স্কুল, পরীক্ষা আর এসব ফেল-টেল থাকবে না।

–রাশেদুল হায়দার
ক্লাস থ্রি ফেল!!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Recent Post

শুভ জন্মদিন ২০২২

আজ আমার তেত্রিশ মতান্তরে পঁয়ত্রিশতম শুভ জন্মদিন! (বয়সে করোনাকালিন হিসেব বাদ দেয়া হয়েছে) ছবিটি আনুমানিক ২০ বছর আগের হারিকেন জমানার। ছত্রিশ ফিল্মের কোডাক ক্যামেরার। মেঘে মেঘে বয়স তো আর কম হলো না। সেই ১৫ টাকা সের চাল সময়কার ছেলে আমি। ৪০ টাকা নিয়ে বাজারে যেতাম। এর মধ্যে মাছ-তরকারি, মুদি সদায় সহ দুই টাকা বাঁচিয়ে .....

বই: প্রোডাক্টিভ মুসলিম

বইটি পড়ে কিছু ব্যাপারে আচার্য হয়েছি। বইটি হাতে নিয়ে পড়ার আগে মনে করেছিলাম, এর ভিতরে লেখা থাকবে শুধু কাজ আর কাজ। কিসের ঘুম, কিসের বিশ্রাম আর কিসের অবসর। হয়তো বলা থাকবে, এই দুনিয়াতে কি শুধু ঘুমাতে আসছেন। শুধু কাজ করেন আর অন্য কিছু নয়। পরবর্তীতে ঘুমের উপর চ্যাপ্টার পড়ে আরও বেশি আচার্য হয়েছি যে, .....

বই: ইন দ্য হ্যান্ড অব তা-লে-বা-ন

১১ সেপ্টেম্বর, ২০০১। মঙ্গলবার। নিউইয়র্ক-বাসীর সকালটা শুরু হয় অন্যান্য দিনের মত! সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা নিউইয়র্কের লোকজন খুব সকালে উঠে যার যার অফিস শুরু করেছে। প্রতিদিনকার সকালের মত হয়তো কেউ কেউ চা-কপি দিয়ে মাত্র অফিস ডেক্সে ওইদিনের মত নিজেকে সেট করে নিচ্ছে। পৃথিবীকে নাড়া দিতে যাচ্ছে এমন কোন ঘটনা ঘটতে চলেছে তখনও এই .....

বই: ফজর আর করব না কাজা!

আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম! মাত্র ফজরের আজান হয়েছে। সামনের বাসার আঙ্কেলের বড় গেটের তালা খোলার খটখট আওয়াজ। তারপর আমার মোবাইলের এক নাম্বার এলার্ম ভেজে উঠলো। একরাশ বিরক্তিসহ এলার্ম বন্ধ করলাম। এই আলতো ঘুমের এমন ঝনঝন তালা খোলার শব্দ আর এলার্মের এমন ভিট-ঘুটে আওয়াজ সত্যিই বিরক্তিকর ছিলো। তারপর কোন রকম উঠে দায়সারা ভাবে নামাজ ঘরে .....

বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ রিভিউ: এ আমি কি দেখলাম?

অফিস থেকে মনে হয় একটু তাড়াহুড়া করেই বের হয়েছি। আজকে বাংলাদেশের চির প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার সাথে খেলা। কয়দিন আগেও এই অস্ট্রেলিয়াকে মিরপুরের মাঠে আমরা কচুকাটা করেছি। সেই হিসেব মতে আজ একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই উপভোগ করবো। টানটান উত্তেজনা থাকবে। বাংলাদেশ হাড় কাঁপানো ব্যাটিং করবে। মাঠ কাঁপানো ফিল্ডিং করবে। টানটান করে বাউন্ডারি হাঁকাবে। দর্শক সাড়ি থেকে বাংলাদেশ! .....

নাফাখুম জলপ্রপাত – নেটওয়ার্কের বাইরে একদিন

আজকে যাবো। কালকে যাবো। এই বর্ষায় যাবো। এমন করতে করতে এক ট্যুরের প্ল্যান চলে প্রায় দুই বছর ধরে। এর মধ্যে করোনা। লকডাউন। শাটডাউন। মাস্ক। স্যানিটাইজার ইত্যাদি ইত্যাদি পৃথিবীতে নতুন করে আগমন করেছে। অন্যদিকে নাই হয়ে গেছে অনেক পরিচিত মানুষ, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-অনাত্মীয়। প্রতি বছর একটা জংলী ট্যুর দেয়ার ইচ্ছে থাকে। বড়সড় একটু গ্রুপ করে কোন .....

All Post