বই: ফজর আর করব না কাজা!
আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম!
মাত্র ফজরের আজান হয়েছে। সামনের বাসার আঙ্কেলের বড় গেটের তালা খোলার খটখট আওয়াজ। তারপর আমার মোবাইলের এক নাম্বার এলার্ম ভেজে উঠলো। একরাশ বিরক্তিসহ এলার্ম বন্ধ করলাম। এই আলতো ঘুমের এমন ঝনঝন তালা খোলার শব্দ আর এলার্মের এমন ভিট-ঘুটে আওয়াজ সত্যিই বিরক্তিকর ছিলো। তারপর কোন রকম উঠে দায়সারা ভাবে নামাজ ঘরে পড়ে আবার ঘুম। এমনি ভাবে চলছিলো। একদিন-দুইদিন যেতে যেতে বিরক্তিসহ ঘুম থেকে উঠে ফজর নামাজে গেলাম। মসজিদে গিয়ে ষষ্ঠ কাতারের এক কোনায় দাঁড়ালাম। ওই দিন জামায়াতে দাঁড়ানোর আগে দুই রাকাত সুন্নতই পড়ার সময় পেলাম না। নামাজ শেষ করে ডানে সালাম ফিরলাম। দেখলাম এক ষাট-ঊর্ধ্ব মুরব্বি। বামে সালাম ফিরলাম দেখলাম ষাট-ঊর্ধ্ব আরেক মুরব্বি। একটু লজ্জা পেলাম মনে মনে! এই ছয় কাতারের ম্যাক্সিমাম লোকই হলো দাঁড়ি পাকা মুরব্বি টাইপের। নিজের লজ্জার সাথে সামনের বাসার মুরব্বির দরজা খোলার আওয়াজের হিসেব মিলে গেলো। কিসের টানে উনি প্রতিদিন এই ফজর নামাজে যাচ্ছেন উনি তা ভালো করেই জানেন! উনি বুঝেশুনেই ধরে নিয়েছেন; সময় আর বেশি দিন নাই! নামাজে না গিয়ে আরাম করে ঘুমের টাইম আর কই?
আর অন্যদিকে,আমি ত্রিশ ঊর্ধ্ব যুবক নামাজে যেতে পারছি না;অলসতা, অপারগতা, এত-এত অজুহাত আর শয়তানের ধোঁকার কারণে। আমিও অপেক্ষায় আছি আগে বয়স ষাট হোক তারপর না হয়ে কেঁপে কেঁপে যামুনে…! হায়রে বয়স! বসয় কি আদৌ ষাট হবে? নাকি উনষাটই থেমে যাবে? নাকি ঊনপঞ্চাশে বা ঊনচল্লিশে?
এটি একটি বিশেষ বই! এর আগে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়ে বেশ কিছু বই পড়লেও এই প্রথম শুধুমাত্র ফজর নামাজ নিয়ে একটি বই পড়লাম। এই রকম একটি বইয়ের আমার জন্য খুব দরকার ছিলো।
আপনারা দেখে থাকবেন; অনেকে এমন আছেন যাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত পড়া হয় কিন্তু মাঝে মাঝে শুধু ফজর নামাজটা ছুটে যায়। আবার যারা নিয়মিত চার ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতে পড়েন কিন্তু শুধু ফজরের জামায়াত মিস করেন। অনেকে শুধু চার ওয়াক্তই নামাজ পড়েন ফজরের নামাজ একদম পড়েনই না বা পরে কাজা পড়ে নেন।
আবার এক প্রকারের আছেন ফজর সহ সব নামাজ জামাতে পড়লেও মাঝে মাঝে জামায়াত ছুটে যায়।
আমি বা আপনি হয়তো এর কোন এক প্রকারের দলভুক্ত। আল্লাহর কাছে মাফ চাচ্ছি এমন ইচ্ছাকৃত অপারগতার জন্য। ফজর জামায়াত ছুটে যাওয়া বা নামাজ ছুটে যাওয়া এটা ইচ্ছাকৃত অলসতা এবং শয়তানের ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়। এর জন্য কোন ওজর আপত্তির সুযোগ নেই। শয়তান অনেক রঙিন করে তার কু-যুক্তি উপস্থাপন করে; যেমন, আরে ব্যাটা তুই সব নামাজই তো জামায়াতে পড়িস তো এই এক ওয়াক্ত তুর ছুটে গেলেও বা এমন কি হবে! সামনে তো অনেক সময় পরে আছে তখন রেগুলার হয়ে যাবি আরকি! তুই অনেক রাত করে ঘুমিয়েছিস ফজর টুক করে বাসায় পড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়বি! অথবা কু-মন্ত্রণা দিবে, দেখ? কত মানুষ তো নামাজই পড়ে না; তুই তো মাশাআল্লাহ চার ওয়াক্ত পড়িস!
এভাবে চলতে চলতে… একদিন নিয়মিত পড়া লোক প্রথমে ফজর নামাজ বাসায় পড়া শুরু করেন! তারপর হঠাৎ একদিন দুইদিন ক্বাযা করেন! তারপর অন্য ওয়াক্ত ক্বাযা করেন! এভাবে চলতে চলতে একদিন নামাজ থেকে অনেক দুরে হারিয়ে যান বা নামাজের প্রতি আর আগ্রহই থাকে না! দেখুন! সব কিছুর মূলেই কিন্তু ফজর নামাজ!
ফজর নামাজ মিস যে শুধু সওয়াব খোয়ানো নই; ফজর নামাজের এক আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে সেটা এই বই পড়লে বুঝা যাবে।
এই বইটা পড়তে আপনার ম্যাক্সিমাম ১০ দিন লাগবে। এমন একটা বই আপনি কেন ফজরের জামায়াতে শামিল হচ্ছেন না তার প্রতি-উত্তরের জন্য যথেষ্ট। আমি শিওর; আপনিও এই বই পড়ার সময় আমার মত লজ্জা পাবেন। কি করার কথা কি করছি? এই ভেবে। এই বই আপনার কু-মন্ত্রণা-যুক্ত মনের সাথে ডিবেট করবে। হারিয়ে দিবে আপনার বেহুদা অপারগতা বা ওজর-আপত্তিকে। এই বই থেকে শয়তানের কুচক্রে যে আমরা আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা তার গিট খুলার সু-মন্ত্রণা পাবেন। এই বইটি পড়ার জন্য সবাইকে বিনীত অনুরোধ রইল।
চলুন শুরু করি। জামায়াতে ফজর নামাজ হোক দিনের প্রথম কাজ। মহান আল্লাহ্! আমাকে আপনাকে সেই তৌফিক দান করুন। আমিন।
রিভিউ: রাশেদুল হায়দার
বই: ফজর আর করব না কাজা।
লেখক: ড. রাগিব সারজানি।
অনুবাদ: আবু মুসআব ওসমান।
Leave a Reply