বই: প্রোডাক্টিভ মুসলিম
বইটি পড়ে কিছু ব্যাপারে আচার্য হয়েছি। বইটি হাতে নিয়ে পড়ার আগে মনে করেছিলাম, এর ভিতরে লেখা থাকবে শুধু কাজ আর কাজ। কিসের ঘুম, কিসের বিশ্রাম আর কিসের অবসর। হয়তো বলা থাকবে, এই দুনিয়াতে কি শুধু ঘুমাতে আসছেন। শুধু কাজ করেন আর অন্য কিছু নয়। পরবর্তীতে ঘুমের উপর চ্যাপ্টার পড়ে আরও বেশি আচার্য হয়েছি যে, লেখক বলেছেন ঘুমান, ঘুমান! আর কাজ করার সময়ে শুধু কাজ করেন। প্রোডাক্টিভিটি সম্পর্কে কি ভুলই না এতদিন জানতাম!
আমি মনে করি একজন সাকসেসফুল মানুষ মানে সারাদিন কাজ করবে এমন নয়। যে এখন অবসর টাইম কাটাচ্ছে এটার মানে হচ্ছে সে তার উপর আজকের অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করেছে।
প্রোডাক্টিভিটি বলতে যদি শুধু কাজ হয় তাহলে আপনি এই কাজের বাহিরে কত কিছু মিস করছেন। তার মানে আপনি সন্তানদের সময় দিচ্ছেন না অথবা আপনি আপনার বাধ্যবাধকতার ইবাদত-বন্দেগির সব কিছু সঠিক নিয়মে করছেন না। আবার শুধু যদি পরিবার আর নামাজ-রোযা নিয়েই থাকেন তাহলে অফিস, ব্যবসায়িক কাজের কি হবে ভাবুন? আসল কথা হলো, একজন মুসলিম হিসেবে আপনি একটি ‘কমপ্লিট কোড অফ লাইফ’কে ফলো করছেন। তাহলে সবকিছুতে যাতে ভারসাম্য থাকে এটাই আপনার উপর ‘কমপ্লিট কোড অব লাইফ’ এর দাবী।
ঘুমের উপর চ্যাপ্টারটি পড়ে খুব ভালো লেগেছে। ঘুমের একটা সাইকেল আছে। আপনার ঘুমের সাইকেল কত মিনিট বা কত ঘণ্টা তা মোবাইল এপসের মাধ্যমেও বের করতে পারবেন। এইরকম একটা মোবাইল এফসের নাম Sleep Cycle: Sleep Tracker। এই মোবাইল এপস ব্যবহারের পর তো আমার নাক ডাকা সহ রেকর্ড হয়ে গিয়েছিলো! হা হা! দিনের বেলায় ২০ মিনিটের ভাত ঘুমে শরীরের ক্লান্তি কাটিয়ে প্রোডাক্টিভিটি বাড়ায় এবং শেষ রাতের নামাজের পর হাতে সময় থাকলে দেড় ঘণ্টার পাওয়ার ন্যাপ নিয়ে আপনি দিনের বেলায় কর্মক্ষেত্রে সতেজটার সাথে কাজ করতে পারবেন।
বইটির মূল আলোচ্য বিষয় হলো, আপনি আপনার ছোট-বড় সব কাজ সঠিক সময়ে যথাযথ নিয়মে এবং ইসলামি উপায়ে কিভাবে করবেন তার একটি পূর্ণাঙ্গ প্রাকটিক্যাল বই বলতে পারেন।
বইটি আমি দ্বিতীয়বার পড়ছি। বইটি দাগিয়ে দাগিয়ে নোট করার চেষ্টা করেছি। আমি মনে করছি, এই রকম একটি বই-ই আমার দরকার ছিলো। কারণ, অনেক কাজই তো করি কিন্তু সময়ের আর কাজের বরকত তো পাই না। ঘুমালে উঠতে পারি না। এক কাজ করতে গিয়ে আরও দশ কাজ মিস করি। মাঝে মাঝে আবেগের বশে একদিন অনেক লোড নিয়ে কাজ করে পরে আবার কয়েক দিন বা সপ্তাহ অলস সময় পার করি। তাই নিজেকে প্রোডাক্টিভ করতে এই বই থেকে কিছু বিষয় জেনে-বুঝে মানার চেষ্টা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছি। বইটি পড়ার সময় আমি নিজেকে নিজে একটা চ্যালেঞ্জ দিয়েছি, পরে কি হবে জানি না তবে এই বই পড়ার সময় দেখি কিছু জিনিস এপ্লাই করবো এমন একটা সংকল্প করি। অন্তত বইটি পড়ার সময়ে নিজের প্রোডাক্টিভিটির পরিচয় দিবো।
স্বাভাবিক ভাবে ২৫০ পৃষ্ঠার যে কোন বই পড়ে শেষ করতে আমার প্রায় ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লেগে যায়। তো আমি মনে করলাম যেহেতু প্রোডাক্টিভিটি নিয়ে পড়ছি সেহেতু নিজেকে একটু প্রোডাক্টিভ করার চেষ্টা করি। একটা টাইম ফ্রেম সেট করে আগের থেকে অনেক কম সময়ে বইটি পড়বো সাথে সাথে অন্যান্য সকল কাজও ঠিক রাখব। আলহামদুলিল্লাহ, সত্যিই আগের চেয়ে দ্রুত এই বইটি পড়া হয়েছে। যা অনেকটা ৫০% বলা যায়।
এই বইটি বারবার-ই পড়া উচিত। অন্তত বছরে একবার হলেও পড়া উচিত। কাজ সবাই করে। কোন কাজ কেউ করে পাঁচ ঘণ্টায় আবার অন্য আরেকজন সেই কাজ করে দুই ঘণ্টায়। এক কাজ করতে গিয়ে আরও অন্য পাঁচ কাজ না করা তো আর প্রোডাক্টিভিটি নয়।
সুতরাং,
মনোযোগ+কর্মক্ষমতা+সময় = প্রোডাক্টিভিটি
এই হলো প্রোডাক্টিভিটির সূত্র!
অর্থাৎ, একটা কাজ আপনি কতটুকু মনোযোগ দিয়ে কতটুকু আপনার কর্মক্ষমতা দিয়ে নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করেছেন সেটায় প্রোডাক্টিভিটি।
রিভিউ: রাশেদুল হায়দার
বই: প্রোডাক্টিভ মুসলিম
লেখক: মোহাম্মদ ফারিস
অনুবাদ: মিরাজ রহমান ও হামিদ সিরাজী
Leave a Reply