বই: রিচার্জ your ডাউন ব্যাটারি
মটিভেশনের বড়ি খাও! পৃথিবী উল্টায়া দাও!!
আমার একেকবার একেকটা খায়েশ উঠে। এবার খায়েশ হলো নেট দুনিয়াই যত মটিভেশনাল বক্তৃতা আছে সব শুনব। তো নেট গেটে সব মটিভেশনাল ভিডিও দেখা শুরু করলাম। বক্তব্যগুলো শুনতে খুব ভালো লাগতো। খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতাম। শুনার সময় ভাবতাম আমি হেন করবো, তেন করবো। তেনা পেঁচিয়ে তাল গাছে উঠে তারপর লাফ দিব। কিন্তু মটিভেশনাল স্পিচ শুনতে শুনতে আমি টায়ার্ড হয়ে তারপর ঘুমিয়ে পড়তাম। ঘুম থেকে উঠে মাথা পুরোই ফ্রেশ এরপর আগের কিছুই আর মনে নেই।
এক লোক তার ছোট দুই বাচ্চাকে বলছে এসো বাবা একটা গল্প বলি। মনে করো আমি গাছে উঠলাম। তারপর আমি একটা একটা করে আম নিচে ফেললাম। তোমরা একজনে ১৭টা আম আর আরেক জনে ১৩টা আম নিয়ে ঝুড়িতে ভরেছো। এখন বলো তো তোমরা দুইজনে মিলে কয়টা আম নিয়েছো?
ছেলে দুইটা বললো একটাও না বাবা। কেন, কেন? কারণ, তুমি আমাদের কথার ছলে ছলে যোগ অংক শিখাচ্ছো!
এই বইটার ব্যাপারটাও একই। গল্পের ছলে ছলে লেখক আমাদের জ্ঞানের কথা বলছেন, উৎসাহ দিতে চাচ্ছেন যাতে আমরা জেগে উঠি এবং কিছু একটা করি। আরে.. আমরাও তো অত বোকা না যে এই জ্ঞান, এই উৎসাহ মাথায় তুলবো!
দেত্তেরি কিচ্ছু ভাল্লাগেনা, কোন কিছুতেই মজা পাইনা। আমার দ্বারা কিচ্ছু হবেনা। আজ মেজাজ খারাপ! কথা কইস না মুড অফ। আজ বৃষ্টি আজ ঘুমামু। আজ রোদ আজ কাজে যামুনা।
পোলাপাইন কত কিছু করলো আর আমি এখনো একটা প্রেম পর্যন্ত করেত পারলাম না। আমি বাজার থেকে মাছ কিনতে পারি না, আমার দ্বারা ব্যবসা-ট্যাবসা কেমনে হবে।
আজ ধুমায়া পাঁচ ঘণ্টা পড়মু। তার আগে একটু ফেসবুক চালায়া নি। উমুক করমু, তমুক করমু। কিন্তু আজকে না কালকে। দুনিয়া উল্টায়া তার উপর জুতার ফ্যাক্টরি বানামু কিন্তু দুনিয়া আগামী বছর উল্টামু। এ বছর আবহাওয়া ভালো না!
এই ভাবে হয়তো আমরা প্রতিনিয়ত হতাশায় ডুবে থাকি। নাহয় তো সব করমু নে, দিমু নে, যামু নে কিন্তু আজ না কাল। আমরা সব কালকের জন্য ফেলে রাখি। এটা আমাদের ইয়ং বয়সের ফ্যাশন। এসব কথা আমরা অন্যকে গর্ব করে বলি। সে সব ভাই-ব্রাদারের জন্য এই বই।
এক বসাতে পড়ে শেষ করার মত একটা বই। আমি বাসাতে পড়ার সাথে সাথে লাঞ্চ বক্সের সাথে অফিসেও নিয়ে গেছি। ফ্রি টাইমে পড়েছি। অফিসে পড়তে একটু লজ্জা লজ্জা লাগছিলো। তারপরেও পড়েছি। সবাই বলবে, ওম্মা! কি জ্ঞানী ব্যক্তিরে.. অফিসে এসেও বই পড়ে। ওর কি কোন কাজ-কর্ম নাই রে..। কেমনে সে বই পড়ার সময় পায় রে.. দে ওরে আরও কাজ ধরায়া দে…!
অনেক সময় মুরুব্বীদের দেয়া উপদেশ থেকেও কাছের বন্ধু বা ইউনিভার্সিটির বড় ভাইদের দেয়া পরামর্শ বেশি কাজ দেয়।
বইটির যে জিনিসটা অন্য বই থেকে একটু আলাদা তা হলো এখানে ভার্সিটির এক বড় ভাই এক ছোট ভাইকে পাইয়া উঠতে বসতে উপদেশ দিচ্ছে। দিচ্ছে তো দিচ্ছে। তাদের মধ্যে তুই-তুকারির সম্পর্ক। তুই-তুকারি করে বড় ভাই ছোট ভাইকে দুনিয়া উল্টানোর পরামর্শ দিচ্ছে। জিনিসটা প্রথমে বেখাপ্পা মনে হলেও পরে বেশ মজা পেয়েছি। ঠিকই তো, আমরা ছোট ভাইদের আদর করে তুই-তুকারি করি।
মটিভেশনের জন্য এই বইটা একটা হোমিওপ্যাথিক হিসেবে কাজ করবে। অনেক সময় বড় ডাক্তারের হাজার টাকার প্রেসক্রিপশনের ঔষধ খেয়েও যখন কাজ হয় না, ঠিক ওই সমস্যা ২০ টাকার হোমিওপ্যাথিক বড়িতে কাজ হয়ে যায়।
সবচেয়ে মজার জিনিস ছিল বইয়ের শেষে নিজের ব্যাটারির চার্জ কতটুকু আছে সেটা পরিমাপ করা। আপনাকে লেখক কিছু প্রশ্ন করবেন, সেটার উত্তর অনুযায়ী আপনি আপনার ব্যাটারি পরিমাপ করবেন। আমার তো এক দাগ এক দাগ করে ব্যাটারির চার্জ হচ্ছিলো। আর ভয়ে ছিলাম কখন জানি ইলেকট্রিসিটি চলে যায়। না জানি লো ব্যাটারির খপ্পরে পড়ে সারাদিন মনটা অফ হয়ে যায়। যাই হোক শেষমেশ ঠেলেঠুলে ৫০% চার্জ করতে পেরেছিলাম।
(বইটা যেহেতু ইনফরমাল ভাষায় লেখা তাই আমিও রিভিউ ইনফরমাল ভাষায় লিখেছি। সো মাইন্ড খাইয়েন না ব্রো…)
বই: রিচার্জ your ডাউন ব্যাটারি
লেখক: ঝংকার মাহবুব
রিভিউ: রাশেদুল হায়দার
Leave a Reply