গুগল মামার হোম কোয়ারেন্টাইন!
লক্ষ্মীটি,
এমন করো না, করোনা!
এই ’লক্ষ্মীটি’ কে? কাকে তুমি আমার সাথে তুলনা করছো? এমন ’করোনা’ কালে সোশ্যাল মিডিয়া এই স্ট্যাটাস পর্যন্ত বউ ব্যক্তিগত ভাবে নিয়ে নিচ্ছে। বিবাহিত পুরুষরে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা আর কারাগারে সশ্রম কারাদণ্ডে থাকা একই কথা। কমোড পরিষ্কার, ঘনঘন বেসিন পরিষ্কার, জানালার কাঁচ পরিষ্কার থেকে শুরু করে বউয়ের নকশি কাঁথার সুতো লাগানোসহ হেন কাজ নেই তিন বেলা খাওয়ার জন্য করতে বাধ্য হচ্ছি না। খুব মাথা নষ্ট অবস্থায় গুগল মামার কাছে জিজ্ঞাসা করলাম, “হাও টু ম্যানেজ আমার নিজের বউ”।
গুগল মামা প্রশ্ন শুনে অনেকক্ষণ হ্যাং হয়ে ছিলো তারপর অনেক ভেবে-চিন্তে জবার আসলো,‘আই এম সরি’। আমি প্রথমে মনে করেছিলাম গুগল হয়তো এই প্রশ্নের উত্তর জানে না বলেই জবাবে বলছে,‘আই এম সরি’। পরে অনেক মাথা খাটিয়ে বুঝলাম এটাই গুগল মামার উত্তর। ‘আই এম সরি’।
এক বাক্যে, এক কথায় গুগল মামা সব সমাধানের ফর্মুলা বাতলে দিয়েছেন। তো সে মোতাবেক ‘আই এম সরি’ এর ক্যারিশমেটিক জাদু বুঝার জন্য হোম-এপ্লাই শুরু করলাম।
বউ যখনই কোন কথা বলবে আমি বলবো, ‘আই এম সরি’। যখন বলছে, এই কাজ কে করছে? আমার জবাব, “আই এম সরি”। তোমার কোন কাজই ঠিক ভাবে হয় না। আমি বললাম, “আই এম সরি”। এই সব ক্ষেত্রে ‘আই এম সরি’ এর ফর্মুলা ঠিকঠাক ভাবে চলছিলো। কিন্তু সমস্যা গিয়ে ঠেকেছে অন্য জায়গায়। এবার যখন বলছে, “বাজারে যাও”। আমার উত্তর, “আই এম সরি”। যখন বলছে, “আমাকে কিছু টাকা দাও”। আমার উত্তর, “আই এম সরি”। এই ফর্মুলা এপ্লাইটাই পরবর্তীতে দেখা গেলো হিতে বিপরীত হলো। ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম রাতে খেতে গিয়ে।
এমন পরিস্থিতিতে একদম নিরুপায়! বাহিরে সেনাবাহিনী, ঘরে বিমানবাহিনী! বাহিরের হোটেল লকডাউন। মামার দোকানের চা খাওয়া লক-ডাউন। বন্ধুদের সাথে জরুরী আড্ডায় নিষেধাজ্ঞা। ওই দিকে আড্ডা দিতে না পাড়ায় দিনদিন কেমন জানি কণ্ঠ বসে যাচ্ছিলো, গলা খসখস করছিলো। অনেক জরুরী কথাও মেমোরি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। ওই দিন দুপুরে খাওয়ার ঘণ্টা-খানিক পর আবার ডাইনিং টেবিলে বসেছি দুপুরে খাওয়ার জন্য। পরে মাথায় চামচের টিং এক আওয়াজে বাংলা ছায়াছবির মত আবার মেমোরি ফিরে এসেছে। আবার দেখা গেলো মনের ভুলে জরুরী ভিত্তিতে ওয়াশরুমে যাওয়ার পরিবর্তে রান্না ঘরে চলে যাচ্ছি।
পরে আবার নিরুপায় হয়ে গুগল মামার শরণাপন্ন হলাম। “মামা, হাও ক্যান আই সারভাইব এট মাই হুম উইথ হার উইথআউট এনি হ্যাসেল”। এই কথা শুনে মামা আবার হ্যাং অবস্থায় চলে গেলো। কিছুক্ষণ পরে উত্তর আসলো, ”দিস কোয়েশ্চেন ইজ টোটালি ইনভেলিড এন্ড ডেঞ্জারাস”! তারপরেও আমি হাল ছাড়িনি! প্রশ্ন করতেই থাকি। এরও অনেক অনেক পর গুগল মামা অনেকটা রেগে বাংলায় ঝাঁজালো জবাব দিলো, ”ভাইরে আমি নিজেও হোম কোয়ারেন্টাইনে আছি। আমারে আর জ্বালাসনে! তোর প্রশ্নের জবাব আমি নিজেও খুঁজছি! দাঁত কামড়িয়ে পড়ে থাকরে, পাগলা..! এই করোনা কালে জানে বেঁচে থাকাটায় বড় কথা”।
লেখাটি www.ppbd.news অনলাইন পত্রিকায় ০৮ এপ্রিল, ২০২০ এ প্রকাশিত