ভালো তরমুজ কেনার গোপন রহস্য

কদিন আগে আমি দুটি তরমুজ কিনেছিলাম। কেনার পর তরমুজ বিক্রেতা বলেছিলেন, ‘ভাই, জিতছেন! তরমুজটা লাল আর মিষ্টি হবে।’ বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, বিক্রেতার কথাই সত্যি ছিল। আমি ‘জিতছি’। সমস্যা হলো, প্রমাণ দাখিলের মতো কোনো ছবি আমার কাছে নেই। তবে আজ আমি আপনাদের বলব সেই ভালো তরমুজ কেনার গোপন রহস্য।

প্রথমে তরমুজের দোকানে গিয়ে কুশল বিনিময় করুন। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো না। খানিকটা খোঁজখবরমূলক কথাবার্তা চালাচালি করে পরিবেশটা একটু হালকা করে নিন। অথবা যে আলোচনা তরমুজ বিক্রেতার পক্ষে যাবে, সে রকম কোনো কথাও তুলতে পারেন। যেমন দেশের পরিস্থিতি, বাজার পরিস্থিতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংকট, তেলের দাম বৃদ্ধি ইত্যাদি। ভুলেও ‘মুখে কেন মাস্ক নেই’–জাতীয় প্রশ্ন করবেন না!

তারপর ধীরে ধীরে বলুন, ‘ভাই, এ বছর এখনো তরমুজ কেনা হয় নাই। এখন একটা কেনার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আমি ভাই ভালো তরমুজ চিনি না। আপনি নিজে থেকে একটা বাছাই করে দেন না। বোঝেনই তো, সংসারে সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে হয়। তরমুজ খারাপ হলে ঘরে গিয়ে আমার অবস্থা কী হবে, ভাবেন!’

তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ুন। তবে মুখে মাস্ক থাকলে সমস্যা আছে। মাস্কের আড়াল থেকে দীর্ঘশ্বাস বোঝা যায় না। তাই জোরেশোরে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ুন এবং সেটা আপনার চোখের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলুন। শরীরী ভাষায়ও যেন দীর্ঘশ্বাসের ছাপ থাকে।

এসবের মানে হলো, আপনি তরমুজ কেনার ব্যাপারে বিক্রেতার কাছে শতভাগ ‘সারেন্ডার’ করবেন। নিজের মধ্যে কোনো ভাবসাব রাখবেন না। হিংসা, বিদ্বেষ, রাগ, ক্ষোভ—সব ঝেড়ে ফেলুন। তরমুজ কিনতে গিয়ে ‘বেশি বুঝি বেশি জানি’ এমন ভাবই তরমুজ ভালো না হওয়ার প্রধান কারণ। তারপর তরমুজ বিক্রেতা তিনটি তরমুজ কানের কাছে নিয়ে তিনটি বাড়ি মারবেন। চতুর্থটা তিনি দেবেন আপনাকে। এবং তিনি বলবেন, ‘এইটা ভালো হবে, বিশ্বাস রাখেন।’

বিক্রেতা তরমুজ দিলে তা নিয়ে সোজা বাসায় চলে আসবেন। ভুলেও জিজ্ঞেস করতে যাবেন না, ‘ভাই, কানের কাছে বাড়ি দিয়ে আপনি ক্যামনে বোঝেন, কোন তরমুজ ভালো?’

জিজ্ঞেস করেছেন তো মরেছেন। আপনার হাতের যে তরমুজ নিয়ে যাচ্ছেন, সেটা ভালো হবে না। এটা নিশ্চিত!

তারপর আর কি? বাসায় গিয়ে পরিবারের সবার উপস্থিতিতে তরমুজটা কাটুন। তরমুজ অবশ্যই ভালো হবে, লাল হবে এবং মিষ্টি হবে।

তবে ‘বাই অ্যানি চান্স’ ওই তরমুজ যদি ভালো না হয়, তাহলে দুঃখ পাবেন না। মনে রাখবেন, এই তরমুজই জীবনের সবকিছু নয়। পরের দিন আবার কিনুন। ওটা ভালো না হলে পরের দিন আবার কিনুন। এবং এভাবে কিনতেই থাকুন। একদিন না একদিন ভালো তরমুজ আপনি কিনতে পারবেনই পারবেন। হ্যাঁ, অবশ্যই পারবেন। কারণ, তরমুজ বিক্রেতা ভাই বলেছেন, ‘বিশ্বাস রাখেন।’ আর কে না জানেন, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু।

লেখাটি দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ১০ এপ্রিল ২০২১ তারিখে প্রকাশিত।

Comments are closed.

Recent Post

শুভ জন্মদিন ২০২২

আজ আমার তেত্রিশ মতান্তরে পঁয়ত্রিশতম শুভ জন্মদিন! (বয়সে করোনাকালিন হিসেব বাদ দেয়া হয়েছে) ছবিটি আনুমানিক ২০ বছর আগের হারিকেন জমানার। ছত্রিশ ফিল্মের কোডাক ক্যামেরার। মেঘে মেঘে বয়স তো আর কম হলো না। সেই ১৫ টাকা সের চাল সময়কার ছেলে আমি। ৪০ টাকা নিয়ে বাজারে যেতাম। এর মধ্যে মাছ-তরকারি, মুদি সদায় সহ দুই টাকা বাঁচিয়ে .....

বই: প্রোডাক্টিভ মুসলিম

বইটি পড়ে কিছু ব্যাপারে আচার্য হয়েছি। বইটি হাতে নিয়ে পড়ার আগে মনে করেছিলাম, এর ভিতরে লেখা থাকবে শুধু কাজ আর কাজ। কিসের ঘুম, কিসের বিশ্রাম আর কিসের অবসর। হয়তো বলা থাকবে, এই দুনিয়াতে কি শুধু ঘুমাতে আসছেন। শুধু কাজ করেন আর অন্য কিছু নয়। পরবর্তীতে ঘুমের উপর চ্যাপ্টার পড়ে আরও বেশি আচার্য হয়েছি যে, .....

বই: ইন দ্য হ্যান্ড অব তা-লে-বা-ন

১১ সেপ্টেম্বর, ২০০১। মঙ্গলবার। নিউইয়র্ক-বাসীর সকালটা শুরু হয় অন্যান্য দিনের মত! সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা নিউইয়র্কের লোকজন খুব সকালে উঠে যার যার অফিস শুরু করেছে। প্রতিদিনকার সকালের মত হয়তো কেউ কেউ চা-কপি দিয়ে মাত্র অফিস ডেক্সে ওইদিনের মত নিজেকে সেট করে নিচ্ছে। পৃথিবীকে নাড়া দিতে যাচ্ছে এমন কোন ঘটনা ঘটতে চলেছে তখনও এই .....

বই: ফজর আর করব না কাজা!

আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম! মাত্র ফজরের আজান হয়েছে। সামনের বাসার আঙ্কেলের বড় গেটের তালা খোলার খটখট আওয়াজ। তারপর আমার মোবাইলের এক নাম্বার এলার্ম ভেজে উঠলো। একরাশ বিরক্তিসহ এলার্ম বন্ধ করলাম। এই আলতো ঘুমের এমন ঝনঝন তালা খোলার শব্দ আর এলার্মের এমন ভিট-ঘুটে আওয়াজ সত্যিই বিরক্তিকর ছিলো। তারপর কোন রকম উঠে দায়সারা ভাবে নামাজ ঘরে .....

বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ রিভিউ: এ আমি কি দেখলাম?

অফিস থেকে মনে হয় একটু তাড়াহুড়া করেই বের হয়েছি। আজকে বাংলাদেশের চির প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার সাথে খেলা। কয়দিন আগেও এই অস্ট্রেলিয়াকে মিরপুরের মাঠে আমরা কচুকাটা করেছি। সেই হিসেব মতে আজ একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই উপভোগ করবো। টানটান উত্তেজনা থাকবে। বাংলাদেশ হাড় কাঁপানো ব্যাটিং করবে। মাঠ কাঁপানো ফিল্ডিং করবে। টানটান করে বাউন্ডারি হাঁকাবে। দর্শক সাড়ি থেকে বাংলাদেশ! .....

নাফাখুম জলপ্রপাত – নেটওয়ার্কের বাইরে একদিন

আজকে যাবো। কালকে যাবো। এই বর্ষায় যাবো। এমন করতে করতে এক ট্যুরের প্ল্যান চলে প্রায় দুই বছর ধরে। এর মধ্যে করোনা। লকডাউন। শাটডাউন। মাস্ক। স্যানিটাইজার ইত্যাদি ইত্যাদি পৃথিবীতে নতুন করে আগমন করেছে। অন্যদিকে নাই হয়ে গেছে অনেক পরিচিত মানুষ, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-অনাত্মীয়। প্রতি বছর একটা জংলী ট্যুর দেয়ার ইচ্ছে থাকে। বড়সড় একটু গ্রুপ করে কোন .....

All Post