বই: আরজ আলী সমীপে

একজন অবিশ্বাসীর প্রথম প্রশ্ন থাকে আমরা না দেখে কিছুই বিশ্বাস করিনা। আমরা আল্লাহকে, পরকালকে, জান্নাত-জাহান্নামকে কখনো দেখিনি। তাই না দেখা জিনিসে আমাদের বিশ্বাস নেই!

এখন একটা বিষয় হলো। ভাই আপনারা আল্লাহ, পরকাল বা জান্নাত-জাহান্নাম আছে কিনা দেখেননি তাই বিশ্বাস করছেন না সেটা হয়তো মানলাম! তবে আপনারা তো গিয়ে আবার এটাও দেখে আসেন নি যে, আল্লাহ পরকাল বা জান্নাত-জাহান্নাম নামের কিছুই নেই। তাহলে আপনারা এটাও তো বলতে পারে না যে এসব নামের কিছুই নেই?

আরজ আলী নামের এক ব্যক্তির লেখা একটা বইয়ের কিছু মামুলি ভুল প্রশ্ন এবং সমালোচনার জবাব এই বইটিতে দিয়েছেন।

আমাদের সমাজে আরজ আলীদের অভাব নেই। উনাদের স্রষ্টার উপর বিশ্বাস নেই। কোরআনকে মোহাম্মদ (স.) এর বানানো কিতাব বলে মনে করেন। কুরআনের ভুল ধরার চেষ্টা করেন। এতটুকুতেও সমস্যা ছিলো না কিন্তু সমস্যা হলো উনাদের ভুল ধরা যে আসলেই ভুল ছিল সেটাও যখন স্পষ্ট হয়ে যায় তারপরেও উনারা জোরপূর্বক ভুলের উপর থেকে যেতে জেদ ধরেন। আরেকটা মজার ব্যাপার দেখা যায় যে, উনারা যে জিনিসের ভুল ধরেছেন সে কুরআনও কখনো পড়ে দেখেননি। শুধু লোক মুখে কুসংস্কার-পূর্ণ কথা শুনে ভুল ধরে মানুষকে বিভ্রান্ত করার দায়িত্ব নিয়েছেন!

তবে দু:খের বিষয় হলো আরজ আলী নিজেই তার লেখা ভুল প্রশ্নের বইয়ের জবাবে এই বইটি নিজে পড়ে যেতে পারেননি। পড়ে যেতে পারলে হয়তো তিনিও বুঝতে পারতেন তার ভুল প্রশ্ন করা যে ভুল ছিলো। তারপরেও উনার ওই বই পড়ে বিভ্রান্তে পড়ে থাকা লোকজনেও অভাব নেই। তারা যদি এই বই পড়েন তাহলেও তারা সেসব বিভ্রান্তি এড়াতে পারবেন।

এই বইটি পড়ে বুঝতে পারলাম। আরজ আলী সাহেব কখনো কুরআন পড়েননি। উনি কুরআন না পড়েই শুধু শোনা কথার উপর বিশ্বাস করে সমালোচনা করে নিজে নিজে বাহাদুর হতে চেয়েছেন। আমাদের ক্লাসরুম গুলোতেও এমন ছাত্র দেখা যায়, যারা যে কোনো বড় স্যারের ভুল ধরতে পারলে নিজেদের বাহাদুর মনে করেন। অথচ দাঁড়িয়ে যখন প্রশ্নটি করেন সব ছাত্র-ছাত্রী প্রশ্নকারী দিকে তাকিয়ে এমন ভাবে হাসেন এই জন্য যে, প্রশ্নকারীর প্রশ্ন তো হয়নি আবার এমন একটা প্রশ্ন কোন একজন জ্ঞানী ছাত্রও করতে পারে না।

তাই বলছি আরজ আলী যদি কুরআন পড়তেন তাহলে উনার এইসব ভুল ধারণাগুলো হতো না।

আমাদের ইসলাম সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান নেই তাই অল্প কিছুতেই আমরা অন্যের কথায় বিভ্রান্ত হয়ে ভুল পথে চলে যায়। অথচ এমন হওয়া উচিত ছিলো কারো কোন কথাকে সত্যের মান দণ্ডে যাচাই-বাচাই করে তারপর গ্রহণ বা বর্জন করা। সে রকম বিভ্রান্ত করার জন্য মনে হয় আরজ আলী ব্যক্তির আর্বিভাব। এখানে আমি আরজ আলিকে যতটুকু দোষ দিবো তার চেয়ে বেশি দোষ দিবো তাদের যারা এসব পড়ে বিভ্রান্ত হয়েছেন। কারণ আরজ আলীর প্রতিটা যুক্তিই ছিলো ইসলামের কথিত বা লোক মুখে রচিত এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন কিছুর কথার উপর।

তবে আরজ আলী যদি এই বইয়ের লেখক ‘আরিফ আজাদ’ এর আগের বই ‘প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ’ বইটি পড়তেন তাহলে মনে হয় তার অনেক ভুল প্রশ্নের উত্তর ওই বইয়ে আগেই পেয়ে যেতেন। (‘প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ’ এই বই নিয়ে একটা রিভিউ লিখবো, ইনশাআল্লাহ)। কারণ উনার বিজ্ঞান নিয়ে কথা এবং মানুষের তাকদির নিয়ে যে দ্বিধা সেটা ওই বইতেই ভালো উদাহরণ দিয়ে বুঝানো হয়েছিলো।

পরিশেষে, এই বইটা অনেক আগে পড়েছি, তবে রিভিউ লিখছি এখন। এসব কথা আমার নিজস্ব চিন্তাধারার এবং মস্তিষ্কপ্রসূত। আশা করি ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং বইটি পড়বেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।

রিভিউ: রাশেদুল হায়দার
বই: আরজ আলী সমীপে
লেখক: আরিফ আজাদ

5 responses to “বই: আরজ আলী সমীপে”

  1. Anonymous says:

    সেই রকম একটা বই

  2. Rashed says:

    Want to read this book.

  3. Adnan says:

    Nice Book

Leave a Reply to Adnan Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Recent Post

শুভ জন্মদিন ২০২২

আজ আমার তেত্রিশ মতান্তরে পঁয়ত্রিশতম শুভ জন্মদিন! (বয়সে করোনাকালিন হিসেব বাদ দেয়া হয়েছে) ছবিটি আনুমানিক ২০ বছর আগের হারিকেন জমানার। ছত্রিশ ফিল্মের কোডাক ক্যামেরার। মেঘে মেঘে বয়স তো আর কম হলো না। সেই ১৫ টাকা সের চাল সময়কার ছেলে আমি। ৪০ টাকা নিয়ে বাজারে যেতাম। এর মধ্যে মাছ-তরকারি, মুদি সদায় সহ দুই টাকা বাঁচিয়ে .....

বই: প্রোডাক্টিভ মুসলিম

বইটি পড়ে কিছু ব্যাপারে আচার্য হয়েছি। বইটি হাতে নিয়ে পড়ার আগে মনে করেছিলাম, এর ভিতরে লেখা থাকবে শুধু কাজ আর কাজ। কিসের ঘুম, কিসের বিশ্রাম আর কিসের অবসর। হয়তো বলা থাকবে, এই দুনিয়াতে কি শুধু ঘুমাতে আসছেন। শুধু কাজ করেন আর অন্য কিছু নয়। পরবর্তীতে ঘুমের উপর চ্যাপ্টার পড়ে আরও বেশি আচার্য হয়েছি যে, .....

বই: ইন দ্য হ্যান্ড অব তা-লে-বা-ন

১১ সেপ্টেম্বর, ২০০১। মঙ্গলবার। নিউইয়র্ক-বাসীর সকালটা শুরু হয় অন্যান্য দিনের মত! সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা নিউইয়র্কের লোকজন খুব সকালে উঠে যার যার অফিস শুরু করেছে। প্রতিদিনকার সকালের মত হয়তো কেউ কেউ চা-কপি দিয়ে মাত্র অফিস ডেক্সে ওইদিনের মত নিজেকে সেট করে নিচ্ছে। পৃথিবীকে নাড়া দিতে যাচ্ছে এমন কোন ঘটনা ঘটতে চলেছে তখনও এই .....

বই: ফজর আর করব না কাজা!

আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম! মাত্র ফজরের আজান হয়েছে। সামনের বাসার আঙ্কেলের বড় গেটের তালা খোলার খটখট আওয়াজ। তারপর আমার মোবাইলের এক নাম্বার এলার্ম ভেজে উঠলো। একরাশ বিরক্তিসহ এলার্ম বন্ধ করলাম। এই আলতো ঘুমের এমন ঝনঝন তালা খোলার শব্দ আর এলার্মের এমন ভিট-ঘুটে আওয়াজ সত্যিই বিরক্তিকর ছিলো। তারপর কোন রকম উঠে দায়সারা ভাবে নামাজ ঘরে .....

বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ রিভিউ: এ আমি কি দেখলাম?

অফিস থেকে মনে হয় একটু তাড়াহুড়া করেই বের হয়েছি। আজকে বাংলাদেশের চির প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার সাথে খেলা। কয়দিন আগেও এই অস্ট্রেলিয়াকে মিরপুরের মাঠে আমরা কচুকাটা করেছি। সেই হিসেব মতে আজ একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই উপভোগ করবো। টানটান উত্তেজনা থাকবে। বাংলাদেশ হাড় কাঁপানো ব্যাটিং করবে। মাঠ কাঁপানো ফিল্ডিং করবে। টানটান করে বাউন্ডারি হাঁকাবে। দর্শক সাড়ি থেকে বাংলাদেশ! .....

নাফাখুম জলপ্রপাত – নেটওয়ার্কের বাইরে একদিন

আজকে যাবো। কালকে যাবো। এই বর্ষায় যাবো। এমন করতে করতে এক ট্যুরের প্ল্যান চলে প্রায় দুই বছর ধরে। এর মধ্যে করোনা। লকডাউন। শাটডাউন। মাস্ক। স্যানিটাইজার ইত্যাদি ইত্যাদি পৃথিবীতে নতুন করে আগমন করেছে। অন্যদিকে নাই হয়ে গেছে অনেক পরিচিত মানুষ, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-অনাত্মীয়। প্রতি বছর একটা জংলী ট্যুর দেয়ার ইচ্ছে থাকে। বড়সড় একটু গ্রুপ করে কোন .....

All Post