ঈদ রিভিউ ২০২১
এবার ঈদে বাড়ি হয়তো যাবো, হয়তো যাবো না! সুযোগ পেলে যাব, না হলে যাব না। গেলেও যেতে পারি, না গেলে নাই। যাওয়ার সম্ভাবনা আছে আবার নাইও। যাব যাব মনে হলেও আর মনে হয় যাওয়া হবে না। এই ঈদে হয়তো যাব না। না যাওয়ার সম্ভাবনায় বেশি। না, এবার আর বাড়ি যাওয়া হবে না। বাড়ি যাচ্ছি না এটা শিউর।
এই রকম দু’টানা, তিন টানা, চার টানা এমনকি পাঁচ টানাতে পড়ে আর যাওয়া হলো না।
ঈদে যে সেমাই-পায়েস খাইনি এই টাটকা মিথ্যা কথা আমি বলছি না। নিজেরা বানিয়ে নিজেরা খেয়েছি। কারও বাসায় যাইনি, কেউও আমাদের বাসায় আসেনি। কারও থেকে ঈদ সেলামি পাইনি, আবার দেইওনি! সবার সাথে সব কাটাকাটি।
বরাবরের মতই, চার বছর আগে বিয়ের বছরে নগদ টাকায় সাথে ৫% ভ্যাট দিয়ে কিনা সেই বিখ্যাত পাঞ্জাবি পরে ঈদের নামাজে পিছনের কাতারে সামিল হয়েছি। ঈদের নামাজের পর কোলাকুলির জন্য ডানে-বামে কোন পরিচিত মানুষ পাইনি। তবে কয়েকজনের সাথে হালকার পরিচিতির উপর নির্ভর করে কোলাকুলি করেছি। এই করোনা কালে ফুল পরিচিত ছাড়া কেউ কোলাকুলি করতে চাইবে না বলে কোলাকুলির আর তেমন কোন রিক্স নিলাম না।
বাসায় এসে পরিবার-আত্মীয়স্বজনের সাথে টেলি যোগাযোগ আর শুকনো ঈদ মোবারক জানিয়ে হালকার উপর ঝাপসা একটা ঘুম দিয়েছি। ঈদের দিনে এইটা আমার পঁয়ত্রিশ বছরের দ্বিতীয় ঘুমের রেকর্ড। মোবাইল ফোনের টিংটং এর ডিস্টার্বে বিকালে সেই ঘুমের আরও দুই ঘণ্টা প্রক্সি দিয়ে পুষিয়ে নিয়েছি।
“ঈদ মোবারক” এই একই মেসেজ দিয়েছি প্রায় দুই-এক’শ জনকে। তাও এই ঈদ মোবারক লেখাটি আমি লিখি নাই। একজনের মেসেজ থেকে কপি মারছি। ঈদ মোবারক বিষয়ক এক বন্ধুর সাথে একটা মজা করেছি। তারে মোবাইলে মেসেজ দিয়েছি এই লিখে, তোমারে ঈদ মোবারক শুভেচ্ছা ভার্তা দিয়েছি ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে, চেক করে দেখ! সে ম্যাসেঞ্জার খুলে দেখে শুধু “ঈদ মোবারক” লেখা।
ঈদের দিন ইস্ত্রি করা পাঞ্জাবির ভাজ তেমন নষ্ট হয়নি। পাঞ্জাবি পরে বিছানায় গড়াগড়ি করাতে একটু-আধটু ভাজ নষ্ট হলেও, এই ভাজেও মিনিমাম আট-দশটা বাসার দাওয়াত কাভার করা যেত। পয়সা খরচ করে আগের মাসে দাঁতের রুট ক্যানেল করিয়ে দাওয়াত বিষয়ক ফায়দা হাসিল না হওয়াতে রুট-ক্যানেল খরচটাই মনে হয় জলে গেল।
আহারে ঈদ! ঈদের ৯৯% মোটামুটি শেষ। আর ১% হাতে রাখছি। যদি, কিন্তু, হয়তো, এমন কিছু অবাস্তব বিষয়কে সামনে রেখে। দেখেন, মনে করেন, যদি কেউ একজন বিকাশে হঠাৎ না বলে ১০০০ টাকা সালামি পাঠিয়ে দেয়। এমন কিছুর জন্য।
আমার মেয়েটার জন্য আপসোস হয়। এই বয়সে তার ঈদ সেলামি দিয়ে আমার সপ্তাহ খানিকের বাজার খরচ চলার কথা। অথচ এই দুইটা ঈদ মিলিয়ে সে তার প্রাপ্য যোগ্য সালামিটুকুন পায়নি।
তবে এই ঈদে আত্মীয়স্বজনের অনেক সিমপ্যাথি আদায় করতে সক্ষম হয়েছি। সেই সিমপ্যাথির জালে উনারা আবদ্ধ করে দু:খ কিছুটা লাগব করে আমারে ঋণের জালে আবদ্ধ করে রেখেছেন।
আরেকটা দু:খের কথা বলে শেষ করছি। এই দুই ঈদ মিলিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে যে সেলামির টাকা অর্থ হিসেব শাখায় জমা পড়ে নাই, এতে অর্থনৈতিক চাকাকে সচল বিষয়ক ঘাটতি পুষিয়ে নিতে নতুন কোন ইনভেস্টমেন্ট প্রজেক্ট লঞ্চ করা এখন সময়ের দাবি!
সমাপ্ত।
ধন্যবাদ সবাইকে। এতো কষ্ট করে ধৈর্যের সাথে পুরো লেখা পড়ার জন্য।
আরেকটা কথা। আজ মুনতাহার দ্বিতীয় জন্মদিন। নো বেলুন। নো কেক। নো সেলিব্রেশন। অনলি দোয়া। সবাই দোয়া করবেন।
বকরি আকিকা অনুযায়ী, শুভ জন্মদিন ‘মুনতাহা হায়দার রাফিয়া’।