সাগর কন্যার খোঁজে কুয়াকাটায়
জীবন যুদ্ধের করাল গ্রাসে পৃষ্ঠ হয়ে এই জীবনকে বয়ে চলছি দু’পায়ে। ছোট্ট এই জীবনকেও আজ অনেক ভারী মনে হচ্ছে। ভার বহনে অক্ষম পরিশ্রান্ত এই মন আর চলতে চায় না। পিলে চমকে পিছে তাকাই, পালিয়ে বেড়ায় জীবন থেকে। পালিয়ে বেড়াতে এইবারের যাত্রার গন্তব্য সাগর কন্যা কুয়াকাটায়।
অফিস শেষে কাঁধে ছোট এক ব্যাগ ঝুলিয়ে এক সন্ধ্যায় বেড়িয়ে পরলাম সেই পালিয়ে বেড়ানোর যাত্রায়। অথচ গতকাল পর্যন্ত নিশ্চিত ছিলাম না আজ কোথায় যাবো, কীভাবে যাবো। টিম ম্যানেজার ইলিয়াস খন্দকার রাসেলের মোবাইল মেসেজ, “ডাবল বেডের থ্রী ফাস্ট ক্লাস কেবিন বুকড, ডিপারচার টাইম ৬.৩০ পিএম”। নিশ্চিত হলাম আজকের যাত্রা হতে যাচ্ছে। মেসেজটা ফরোয়ার্ড করে দিলাম কবি আবদুল গাফফার আর সোহাগের কাছে। যাওয়া কনর্ফাম করলো অন্য তিন সহযাত্রী বন্ধু, ‘রবিউল’, ‘রানা’ আর বন্ধু কাম কলিগ, ‘জয়’। আকস্মিক পারিবারিক প্যাঁচে পরে যাত্রার দুই ঘণ্টা আগে টিপু দু: খ প্রকাশ করলো, সে যেতে পারছেনা। টিপুকে খুব মিস করবো, সে না থাকলে টুর ঠিক জমে উঠেনা। তার ফাউল কাজগুলো ট্যুরের জন্য বেশ উপভোগ্য, মাঝে মাঝে বিপজ্জনকও বটে।

(বা-থেকে) রবি, রানা, আমি, লঞ্চ মিস করা সোহাগ, গাফ্ফার, দলনেতা রাসেল
যাত্রা শুরু হলো রোমান্টিক এক বেদনার কাহিনি দিয়ে। কাহিনিটা অনেক সিনেমায় দেখা। নায়ক হাত বাড়িয়ে ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে, অন্যদিকে হাই হিল পড়া নায়িকা দৌড়িয়ে আসছে আর চিৎকার করে নায়ককে ডাকছে, ‘দাঁড়াও হায়দার, আমাকে নিয়ে যাও তোমার সাথে’। উল্লেখ্য এখানে ‘হায়দার’ নামটা ওই সিনেমার নায়ক হিসেবে কল্পনা করা হলো। পো. . পা ভেঁপু বাজিয়ে ট্রেনের গতি একটু একটু করে বেড়ে যাচ্ছে। নায়িকা ছুটছে, নায়কও হাত বাড়িয়ে আছে…… ।
আমরা লঞ্চ থেকে হাত বাড়িয়ে অপেক্ষায় আছি সোহাগের জন্য, লঞ্চ ছাড়ার আর মাত্র ৩০ মিনিট বাকি। সোহাগ ট্রাফিক জ্যামে আটকে আছে লোকাল বাসে। একটু একটু করে সোহাগের হার্ট-বিট বেড়েই যাচ্ছে। সময়ও থেমে নেই, ছুটে চলছে সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটকে ছোঁয়ার জন্য। লোকাল বাস ছেড়ে অনেক পথ দৌড়িয়ে সিএনজি নিয়েছে ‘সোহাগ’। অন্যদিকে লঞ্চ পো. . পা করে হর্ন দিচ্ছে। কান ফাটানো হর্নের আওয়াজে বলছি, “সোহাগ, তোমাকে আমি শুনতে পাচ্ছি না, তবে দেখতে পাচ্ছি তুমি গুলিস্থানের জ্যামে আছো”। নিজের মেজাজকে যথাসাধ্য কন্ট্রোল করে সান্ত্বনার সুরে সোহাগকে বললাম “সোহাগ, তুমি পারবে কারণ তোমার আছে সিএনজি”। একি! পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে লঞ্চ ছেড়ে দিচ্ছে কেন? সোহাগ যে এখনো আসেনি। এই লঞ্চ, এই লঞ্চ…. . থামো…. থামো….! সোহাগকে ছাড়াই হাস্য উজ্জ্বল কষ্টের গ্রুপ সেলফী দিয়ে যাত্রা শুরু হলো। সোহাগকে পরামর্শ দেওয়া হলো রাত ৯টার বরিশালের লঞ্চে আসতে। দেখা হবে বন্ধু কুয়াকাটায়, কথা হবে মোবাইলে’।
কাঁধের ব্যাগটি ক্যাবিনে রেখেই আমরা চলে গেলাম, লঞ্চের ছাদে। বিশাল আকৃতির খোলা ছাদকে ফুটবল খেলার মাঠ মনে হচ্ছে। চাঁদের আলোয় চারেদিক ফকফকে। পূর্ণিমার চাঁদকে আজ সত্যিই ঝলসানো রুটির মত মনে হচ্ছে, পূর্ণ আলো দিয়ে আমাদের যাত্রার সঙ্গি হলো চাঁদের বুড়িও। লাউড ভলিয়মের বিরহের গানের সাথে গুনগুনিয়ে সুর মিলিয়ে চাঁদের বুড়ির সাথে আড্ডা বড্ড জমে উঠেছে। ইলিশ ধরার নৌকার মিটমিট আলোয় সজ্জিত রাতের সাগরকে দিয়েছে নতুন রূপ। চুল উড়িয়ে দেওয়া বাতাসের সাথে গভীর রাতের সমুদ্রের ছলাৎ-ছলাৎ শব্দকে মনে হচ্ছে কোনো সুমোহনীর কণ্ঠের ব্যাকুল করা গান। যে গানে নিজের মনকে ব্যাকুল করছে কোনো এক অধরাকে ধরার লক্ষ্যে, কোন অজয়াকে জয় করার মোহে। জীবনের সকল সুন্দর দিনগুলির কথা আজ মনে পরছে। সকল স্মৃতি আজ এক হয়ে আমাকে বাসিয়ে নিচ্ছে নিরুদ্দেশের পথে।
রাত ১২টায় পর এক ঘুমেই উঠে দেখি লঞ্চ পটুয়াখালী এসে লাঙল করেছে। চোখ কচলিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে লঞ্চ থেকে নেমে সকালের নাশতা, তারপর আবার বাস ধরব কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে। বাসে জানালার পাশে বসে বাহিরে তাকিয়ে আছি, তখনো ধানের শিস থেকে শিশির ঝড়েনি। মিষ্টি সূর্য রশ্মিতে চকচক করা সে শিশির ফোঁটা টপটপ করে ঝড়ে পরছে। আর পুব দিকের স্নিগ্ধ বাতাসে নতুন অনুভূতি তৈরি করছে।

দুই ফেরি সহ পাক্কা চার ঘণ্টা লাগল কুয়াকাটা পৌঁছাতে। কুয়াকাটায় জুম্মার নামাজ পড়ে রাক্ষুসে খিদে মিটিয়ে হোটেলে এসে সবাই যেভাবে বিছানায় পড়ল তা ভিডিও করে রাখার মত। সাগরের দক্ষিণা বাতাসের সাথে “ঘুম পাড়ানি মাসি-পিসি, মোদের রুমে এসো” সবাই বেমালুম ভুলে গেল তারা সমুদ্রে গোসল দিতে এসেছে, হোটেল ভাড়া করে দুপুরের ঘুম দিতে নয়।
এই কু-মতলবের সম্পূর্ণ দায়ভার নিতে হবে আমাদের টিম-ম্যানেজার নায়ক রাসেলকে, আর দুপুরের ঘুম রোগী কবি আবদুল গাফ্ফারকে। কবি আ. গফফারের চেহারার সৌন্দর্য রক্ষার এই ঘুম যে কোণ ট্যুরের জন্য ক্ষতিকর। যা পূর্বেও অনেক ট্যুরে ঘটেছে।
আমি ঘুম না যাওয়ার প্রত্যয়ে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে অনেকটা বাধ্য হয়ে নায়ক রিয়াজ অভিনীত বাংলা সিনেমার অংশ বিশেষ দেখছি বাংলা ভিশনে। সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ল, এই ফাঁকে আমিও একটু চোরা ঘুম দিয়ে নিলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি বিকেল ৪টা এখন পর্যন্ত আমরা হোটেল রুমে, কখন রেডি হব কখন সমুদ্রে গোসল দেব?
সাগরে লাফালাফি শুরু হলো, যাকে যার ইচ্ছে ভিজিয়ে দিচ্ছে। সোহাগের লঞ্চ মিসের জন্য চারটা চুবানি ধার্য ছিলো, সবাই মিলে দৌড়ে তাকে ধরলাম। ঢেউয়ের তালে তালে গা ভাসিয়ে দিচ্ছি। এই দৈহিক যন্ত্র একটা ফিটনেস বিহীন লোকাল গাড়ী! এটা প্রমাণ হলো দৌড় এবং উল্টো হাঁটা প্রতিযোগিতায়। ব্রেকফেল করা ঢেউয়ের পানি এসে মুছে দিচ্ছে বালিতে ‘Haider’ লেখা নামটা। ক্ষণে ক্ষণে বদলে যাওয়া বিকেলের সূর্যটাকে সন্ধ্যার অন্ধকার কখনযে টুপ করে গিলে ফেলল খেয়ালি করলাম না। ভিজা কাপরে দুই পকেট ভর্তি বালি নিয়ে ফিরলাম হোটেলে। ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার খেয়ে আবার খালি পায়ে হাটলাম সমুদ্রের কুল ঘেঁষে। রাতের উজ্জ্বল জোছনার সাথে সাগরের মিষ্টি বাতাস এসে বুললিয়ে দিচ্ছে তুলতুলে গালে। চিড়চিড়ে পায়ের পাতা ডুবানো সাগর পানির মাঝে খালি পায়ে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে নৌকায় বসে রাত দশটার পর্যন্ত আড্ডা।
কুয়াকাটার প্রধান আকর্ষণ ভোরের সূর্যোদয়ের টাইম ভোর ৫.৫৮ মিনিট। যেতে হবে হোটেল থেকে প্রায় ৯-১০ কিলোমিটার দূরে ঝাউবনে। রাতেই একটা অটো রিজার্ভ করা হলো। সর্বসম্মতিক্রমে রওনা দেওয়ার টাইম ঠিক হলো ভোর ৪: ৩০ মিনিট, আমি কথাটা আবার বলছি, “ভোর ৪: ৩০ মিনিট” (না. . , অনেকে ভুল ক্রমে বিকাল ৪: ৩০ মনে করতে পারে, বিশেষ করে রানা আর রবিউল)। এতো ভোরে উঠে সূর্যোদয় দেখা, এটা ঘুম পাগলাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। ঘুম থেকে জাগানোর দায়িত্ব সম্পূর্ণ নিজের কাঁদে নিলাম। ঘোষণা করে দেওয়া হলো, “সবাইকে প্রথম ডাকেই ঘুম থেকে উঠতে হবে”। কেউ ঘুমের জন্য সূর্য উদয় মিস করে কপাল চাপড়িয়ে হা-হুতাশ করে “আমার সব গেল” বলে উচ্চ-বাচ্য করে পাগলামী মার্কা কথা-বার্তা বললেও এতে কর্তৃপক্ষের কিছু যাবে না আসবে না, হুম কথাটা যেন মনে থাকে।
যাই হোক, হুমকি-ধমকি কিছুটাও হলেও কাজ দিয়েছে। সবার আরামের ঘুমকে হারাম করে দিলাম যথা সময়ে। প্রথম ডাকেই ঘুম থেকে উঠে লাল লাল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, রবিউল আর ছোট্ট খোকা রানা। মনে হয় আমি এই মাত্র তাদের পাকা ধানে মই দিয়েছি। খুব ভোরে উঠে ঘুটঘুটে অন্ধকারে রওনা দেওয়া হলো ঝাউবনের দিকে, কিছুদূর গিয়ে অটো ছেড়ে আবার মোটরসাইকেলে করে যেতে হবে মূল সূর্য উদয়ের জায়গায়। লাল আভায় ঠান্ডা ঝিরঝিরে বাতাসের সাথে কল্পনার সব রং একত্র করে জেগে উঠলো রক্তিম সূর্যোদয়। সমুদ্রের ধারে এ যেন জীবনের প্রথম সূর্যোদয়। থই থই জলের তরঙ্গের সাথে সূর্যের সোনালি রশ্মির ব্যাকুল মনের আকুল আবেদন যেন ফুরাতে চায় না। ক্লিক ক্লিক…, সূর্যকে হাতে, মুখে, মাথায় নিয়ে ছবি তোলার পোজ দিয়েছে সোহাগ।
দুপুর ১টা পর্যন্ত ভাড়া করা অটোতে এখন যাবো আমাদের আরেক মূল আকর্ষণ কাঁকড়ার চরে। অটোতে যেতে সমুদ্রের পাশের গ্রামের নয়নাভিরাম অপরূপ দৃশ্য ভুলার মত নয়, সাথে সোহাগের আবেগী গানের সাথে আমাদের বেসুরা কন্ঠের সুর মিলানোটা পরিবেশকে আরো জমিয়ে দিয়েছে। এই প্রাকৃতিক পরিবেশে টিপুকে খুব মিস করছি, টিপুকে ফোন দিয়ে ফাজলামো করে বললাম, “দেখো টিপু, তোমাকে আমরা সবাই খুব মিস করছি, কুয়াকাটায় যত জায়গায় ছাগল দেখেছি শুধু তোমার কথা মনে পরেছে…. . ”। অপর প্রান্ত থেকে মোবাইল কাঁপিয়ে খিল খিল করে টিপুর ভিলেন হাসি।
আমরা এখন কাঁকড়ার চরে যার আরেক নাম লেবু বাগান। লিকলিকে শরীরের স্মার্ট এক ছেলে নিজের পরিচয় দিলো, ‘আমার নাম, তরিকুল ইসলাম খোকন, কুয়াকাটায় এক পিচ নো ডুপ্লিকেট’। তার চাপার জোরে মুগ্ধ হয়ে আমরা কাঁকড়া আর ইলিশ না কিনে পারলাম না। ইলিশ যেহেতু কিনেই ফেলেছি তাহলে লাঞ্চ সাড়তে দোষ কি? এখন নতুন সিদ্ধান্ত এই কাঁকড়ার চরে ঝুপড়ি চালের নিচে সাগর দেখে দেখে দুপুরের লাঞ্চ সাড়বো। লাঞ্চ সাড়ার আগে কবি আবদুল গফফারে কু-প্ররোচনায় আবার সাগরে গোসল করার লোভ সামলাতে না পেরে নেমে পরলাম একমাত্র শুকনা কাপড় পড়ে। গোসল শেষে এখন খাওয়া দাওয়ার পালা। মেনু, কাঁকড়া, ইলিশ ভুনা আর ভাতের সাথে ফ্রি ডাল। ফ্রি ডালের অফার পুরোপুরি কাজে লাগালো, জয় আর কবি আবদুল গাফফার। যেভাবে তারা ডালের বাটি সাবাড় করল, তাতে ওই দোকানি কাউকে এই ফ্রি-ডালের অফার দিতে সাত বার চিন্তা করবে। রসনার সকল স্বাদ মিটিয়ে খাওয়ার পরিবেশনকারী একজনকে ‘থ্যাংক ইউ’ দিলো জয়, ওমা সে ‘থ্যাংক ইউ’ প্রতি উত্তররে বললো, “এতো থ্যাংক ইউ-র দরকার নাই, ‘থ্যাংক ইউ’ নিতে নিতে মেমোরি লোড হয়ে গেছে…. ”। ফিরার সময় “তরিকুল ইসলাম খোকন, কুয়াকাটায় এক পিচ নো ডুপ্লিকেট” বললো, “মামা, আগামী বছর ভাবিকে নিয়ে আসিয়েন”। কথাটা মাথার উপর দিয়ে গেলো, কোন মামা আর কোন ভাবি? এখান থেকে সুন্দরবনের এক অংশ দেখা যায়, খুব বেশি সময় থাকলে ট্রলার ভাড়া করে দেখে আসতাম সুন্দরবনও, কিন্তু আপাতত কাঁকড়ার চরের সাথে সুন্দর বনের দেখার এই ফ্রি অফারে সন্তুষ্ট থাকলাম। ফিরার পথে শুঁটকি পল্লি দেখে হোটেলে এসে ব্যাগ গুছিয়ে রওনা দিলাম বিকেল ৫টার লঞ্চ ধরার জন্য।
কুয়াকাটা থেকে পটুয়াখালী আসার পথে তিন ঘণ্টার যাত্রা তাও বাসের ছাদে করে, বাসের অগ্রিম টিকিট না করার যে এমন একটা ভালো পরিণাম হবে, কে জানতো? আল্লাহ ভরসা করে আমরা উঠে পড়লাম বাসের ছাদে। অতিরিক্ত সাবধান ও অতিরিক্ত অলস সোহাগ যাত্রার দোয়া পড়ে নিল, ‘বিসমিল্লাহে মাজরেহা ওয়া মুরসাহা ইন্না রাব্বিলা গাফুরুর রাহিম’। সাঁই সাঁই করে চলা চলন্ত বাসে দু’হাত প্রসারিত করে পাখির মত আমরা উড়তে লাগলাম। ঝুঁকিও কম নয়, মাঝে মাঝে গাছের ডাল-পালা থেকে বাঁচতে সাবধানতা অবলম্বন করে মাথা নিচু করতে হচ্ছে, এই ঝুঁকি মনে হয় আনন্দের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমি করছি ভিডিও আর জয় তুলছে সেলফি।
ভীরুর আন্ডা কবি আ. গাফফার আর রবিউল ভ্যাপসা গরমে বাসের ভেতর দাঁড়িয়ে চ্যাপ্টা হচ্ছে। চারিদিকে যেন সুন্দর সবুজের কারখানা। মনে হচ্ছে সাইক্লোন টাইপের বাতাসের বিপরীতে আমরা উড়ে চলছি, বাসের ড্রাইভার আমি আর হেলপার জয়।
লঞ্চ ছাড়ার মাত্র আধা-ঘণ্টা আগে এসে লঞ্চ ঘাটে পৌঁছালাম। এখন ভাটির টানে ফিরে চলছি ঢাকার দিকে। সাগরকে অনেক জেনেছি বুঝেছি, সাগরের থেকে শেখার আছে অনেক কিছু। ছোট বেলায় ভেরে উঠেছি আরেক সাগর দেশ, ‘সন্দ্বীপে’। ফিরার পথে সাগরের প্রতি যত অভিমান তাও জেগে উঠলো মনের গহিনে। এই সাগর কেড়ে নিয়েছে আমার শৈশব জীবনের স্মৃতি, আমার খেলার মাঠ, আমার শখের স্কুল ঘর, আমাদের দুই-দুটা বসত বাড়ি। লঞ্চের রেলিং-এ হাত রেখে দুর সাগরের দিকে তাকিয়ে, আমার এক পোরানো ফেসবুক স্ট্যাটাসের কথা মনে পড়লো,
“উচ্ছ্বাসের ঢেউ-খেলার একদিন ভাটা পরবে জানতামএখন আমি ভাটির টানে গভীর সমুদ্রে হাবু-ডুবু খাচ্ছি। কুল কিনারা ছাড়া তলা-বিহীন গভীর সমুদ্রে সাঁতরাচ্ছি। শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য, একটি আশাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। বাঁচার আসায় খড় কুটা যাই পাচ্ছিতাই আঁকড়ে ধরছি শেষ অবলম্বন হিসেবে। এই ভাবে বেঁচে থাকতে থাকতে একদিন জীবনেরওশেষ হবে, হয়তো এইটায় বেঁচে থাকা, এইটায় বাস্তবতা”।
আল্লাহ হাফেজ সাগর কন্যা কুয়াকাটা।
লেখা: রাশেদুল হায়দার
ছবি: জয়
ফেসবুকে কমেন্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এই ভ্রমণ গল্টটি শিশু-কিশোর পত্রিকা “কিশোর কণ্ঠের” মে, ২০১৬ সংখ্যায় প্রকাশিত।
nice
Thanks