বই: রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড (অনুবাদ)
টাকার দুই ধরণের ব্যবহার। এক, টাকার জন্য কাজ করা। যেটা আমরা সবাই কম বেশি করে থাকি। আরেক, টাকাকে নিজের জন্য কাজ করানো। এমন কোন প্রোডাক্ট বানানো বা আইডিয়া ক্রিয়েট করা যেটা দিয়ে আপনা-আপনি লয়ালিটি বা লাভ আসবে।
আমাদের সমাজের বর্তমান অবস্থা হলো ধনীরা আরও ধনী, গরীবেরা আরও গরিব আর মধ্যবিত্তদের আজীবন থাকে ঋণের বোঝা।
আমরা বেশির ভাগ লোক অন্যের অধীনে চাকুরী করে থাকি। সবাই চাই যে একটা সিকিউর জব যেটাতে ফিউচার ভালো এবং বয়স শেষে মোটা দানের একটা প্রভিডেন্ট ফান্ড। এমন কি আমরা ৬০ বছর চাকুরী করি এই প্রভিডেন্ট ফান্ডের জন্য। সেজন্য মালিক পক্ষ বা কর্তৃপক্ষও বুঝে ফেলে কিভাবে আমাদের ধরে রাখতে পারবে। কোম্পানি বা সরকার আমাদের এমন কম বেতনও দিবে না যে আপনি চাকুরী ছেড়ে চলে যাবেন। এবং নতুন কোন উন্নয়নমূলক কিছু করার চিন্তা করবেন। আবার এমন বেশি বেতনও দিবে না যে আপনি এই বেতন দিয়ে বড় লোক হতে পারবেন। এবং এভাবেই আমরা সবাই টেনে টুনে চলছি। হয়তো বেশ ভালোই চলছি। কিন্তু এখানে ধনী হওয়া নিয়ে কথা হচ্ছে। তাই বেশ ভালো চলা আর ধনী হওয়া এক কথা নয়। আপনি যদি শুধু আপনার বেতনের উপর নির্ভর করেন তাহলে আপনি কখনোই ভালো একটা সেভিংস করতে পারবেন না সেজন্য আপনি ধনীও হতে পারবেন না। আপনাকে যেটা করতে হবে আপনার বর্তমান জবের পাশাপাশি দ্বিতীয় বা সেকেন্ডারি ইনকাম সোর্স বের করতে হবে যেটা দিয়ে আপনি ধীরে ধীরে ভালো ইনকামের দিকে যেতে পারবেন। এবং সেটা অবশ্যই হালাল বা বৈধ ইনকাম হওয়া জরুরী। আপনি দিনে চাকুরী করলেন আবার রাতে চুরি করলেন তাহলে তো আর সেই সেকেন্ডারি ইনকাম করা হলো না। আর চুরির ধন দিয়ে বড় লোকও হওয়া যায় না।
পত্যেক পিতা-মাতা এবং স্কুলের শিক্ষক চায়, “তুমি স্কুলে যাও, ভালো গ্রেড নাও আর একটা নিরাপদ ও সুনিশ্চিত চাকুরী খুঁজে নাও”। যে চাকুরী হুটহাট চলে যাওয়ার ভয় নেই সেই যতই কম বেতনের হোক না কেন এমন চাকুরীকে আমরা সিকিউর জব বা নিরাপদ চাকুরী বলে থাকি। তবে সত্য কথা হলো এমন সিকিউর জবের কথা কেউ যদি চিন্তা করে এবং জীবনের জন্য নতুন কোন চ্যালেঞ্জ বা ঝুঁকি নেয়ার থেকে দূরত্ব বজায় রাখে তাহলে তার এই সিকিউর জব দিয়ে জীবন হয়তো চলে যাবে তবে ধনী আর হতে পারবে না।
লেখকের ড্যাড দুজন। একজন রিচ ড্যাড অন্যজন পুওর ড্যাড। পুওর ড্যাড হল তার নিজের পিতা। তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। পিএইচডি ডিগ্রীধারী এবং চার বছরের গ্র্যাজুয়েশন দু’বছরে শেষ করেছেন। এবং অন্যান্য নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পূর্ণ স্কলারশিপ নিয়ে আরও কিছু উচ্চতর ডিগ্রী নিয়েছেন। তিনি অনন্ত মেধাবী এবং বিচক্ষণ। সব সময় সিকউর লাইফ নিয়ে চিন্তায় থাকেন। সন্তানদের সিকিউর লাইফ গঠনের উপদেশ দিয়ে থাকেন।
আবার অন্য রিচ ড্যাড হলেন লেখকের আরেক অন্তরঙ্গ বন্ধুর বাবা। যাকে লেখক রিচ ড্যাড বলে ডাকেন। যিনি আপাদমস্তক একজন ব্যবসায়ী। তবে তিনি ক্লাস এইটও পাশ করতে পারেননি।
তারা বিশেষ ভাবে দু’জন সফল ব্যক্তি নিজ নিজ জায়গায়। অর্থবিত্ত বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গিও দু’জনের আলাদা আলাদা। তাই দু’জন দুই দিক দিয়ে সফল হয়েছেন। একজন অর্থবিত্তে অন্যজন শিক্ষাদীক্ষায়।
এখানে দুজন পিতার বিভিন্ন উপদেশ এবং দু’জনের দু’রকমের চিন্তা ধারার পার্থক্য লেখক তুলে ধরেছেন নিজের জীবনের গল্প বলতে বলতে।
কেউ যদি উদ্যোক্তা হতে চায় বা নতুন কোন ব্যবসা খুলতে চাই তাহালে তার জন্য এই বইটি উৎসাহমূলক বই হিসেবে কাজ করবে।
ঠাসাঠাসি লেখার জন্য বইটি শেষ করতে অনেক কষ্ট হয়েছে। দোষ অবশ্যই প্রকাশকের। পেজ কমানোর ধান্দায় প্রকাশক লেখার বিন্যাসে জগাখিচুড়ি করেছেন আর অনুবাদও আরেকটু ভালো হতে পারতো।
আশাকরি বইটি আপনাদের ভালো লাগবে। ধন্যবাদ।
রিভিউ: রাশেদুল হায়দার
বই: রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড (অনুবাদ)
লেখক: রবার্ট টি কিয়োসাকি
Thanks for your amazing review. InshaAllah I will try to read this book soon.
চমৎকার রিভিউ। রিভিও পড়ে বই পড়ার ইচ্ছা অনেকখানি বেড়ে গেল