পাহাড়ের দেশে, মেঘের সাথে Nov 02, 2017 ভ্রমণ কাহিনী সুন্দরবন নাকি কেওক্রাডাং এনিয়ে চরম বিতর্ক এরপর ইনফরমেশন কালেকশন, প্লানিং। সুন্দরবনে যাওয়ার খরচ শুনে সবার মাথায় হাত! আর কেওক্রাডাং এই গরমে গেলে মাথায় আইচ ব্যাগ দিয়ে রাখতে হবে! শেষ পর্যন্ত নতুন প্লান আমরা সাজেক যাচ্ছি খাগড়াছড়ি হয়ে, সাথে ফ্রি টুর চট্টগ্রাম। যাত্রার সঙ্গী, টিপু, জিসান আর কবি মুহাম্মাদ আবদুল গাফ্ফার। টিপু হলো আমাদের ম্যানেজার, আমি ওর অ্যাসিস্ট্যান্ট আর বাকি দুজন কোন পদ পায়নি! এই পদ গুলো সম্পূর্ণ যোগ্যতার ভিত্তিতে জোর করে নেওয়া, অন্য দু’জনের আপত্তির তোয়াক্কা করা হয়নি! এমনিতেই আমরা চারজন চার প্রকারের ফাজিল ডিগ্রি সম্পূর্ণ করা, পূর্ব দিকে রাস্তা হলে টিপু যাবে উত্তর দিকে, কবি গাফ্ফার দক্ষিন দিকে, আমি পশ্চিম দিকে, জিসান অসহায় হয়ে জায়গায় বসে থাকবে, এহলো আমাদের অন্যান্য এক বৈশিষ্ট্যের নমুনা। আমি চরম অনিশ্চয়তার মাঝেও মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছি, অফিস ম্যানেজ করে ছুটি নিয়ে যেতে হবে, টিকিট হয়ে গেছে এক সপ্তাহ আগে, তারপরেও আমি কেন জানি অনিশ্চয়তায় ভুগছি। চাইলেই এখন আর টুর-মুরে যেতে পারি না, তাও ৩ দিনের জন্য, কেমন জানি নিজের থেকেই অসম্ভব মনে হচ্ছে। যাই হোক, যাওয়ার দিন অফিস থেকে রাত ৮টায় বের হয়ে ১০টার বাসে সিটে বসে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম, মনে হয় যেতে পারছি, আলহামদুলিল্লাহ। সবাই মিলে একটা সেলফি দিয়ে ছবি তোলার শুভ-উদ্বোধন ঘোষণা করা হলো, ওই দিকে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাসও ছাড়লাম, “কথা ছিল হারিয়ে যাব”, শিরোনামে। “বিসমিল্লাহে তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ” মনে মনে আরও দোয়া দরুদ পড়ে নিলাম। ঘণ্টা-দু-এক বাস চলার পর অনেকের নাক ডাকার শব্দেই বলে দিচ্ছে তারা কত গভীর স্বপ্নে আছে। আমি গরিব হলেও আমার ঘুমটা বেশ বড় লোকের। উনি! মানে ঘুম, সহজেই আসতে চাননা। জানতামও আজকে আর ৯৯ থেকে উল্টো দিকে গণেও ঘুমকে ভাগে আনা যাবে না। রাস্তার গাড়ি গুলো যেতে থাকল সাঁ সাঁ করে, আমি জেগে থাকলাম আর সাথে রাস্তার গাড়িগুলো, মাঝে মাঝে দুরের কোন বাতির মিট মিট আলোর সাথে কানে গুজে দেওয়া ইয়ার ফোনের স্লো ভলিউমের গান বেশ ভালোই লাগছে। খাগড়াছড়ি পৌঁছলাম ভোর ৭টায়, পেটের হালুম ডাকে জানান দিল পেটেও কিছু খাওয়ার হক আছে। ঢুকে পরলাম এক হোটেলে, টিপু কল দিল তার বন্ধু সুলভ মামাকে, মামা মিজানুর রহমান খাগড়াছড়ি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের টিচার, ওনিতো আমাদের পেয়ে বিষণ খুশি, চার পাশের সবকিছু বুঝাতে লাগলেন একজন পাক্কা টুর গাইডের মতো, ওনাকে আমার খুব ভালো লেগেছে, এত সহজ-সরল আর সাবলীল ভাষার মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। ওনার এখানে একটু রেস্ট করে চলে গেলাম বাস স্ট্যান্ডে, যেখান থেকে সাজেকের দূরত্ব এখনো প্রায় ৭০ কি. মি। তাও তিন জায়গায় গাড়ি পরিবর্তন করে যেতে হবে। খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা-বাঘাইহাট-কাসালং-মাসালং-সাজেক এই হলো সাজেকের রোড ম্যাপ। খাগড়াছড়ি থেকে উঠলাম এক বাসে, দীঘিনালা পৌঁছতে প্রায় এক ঘণ্টা লাগবে। বাসের অবস্থা অনেকটা ঢাকার ৬ নং বাসের মতো। সাথে নিলাম কাঁচা বাদাম, কলা ও কমলা। বাসে বসে এইসব খেয়ে মুখের ব্যায়ামটা সেরে নিলাম। এই কি! টিপু আর জিসান এই পাহাড়ি রাস্তায়ও ঘুমাচ্ছে! ওরা কি ঘুরতে এসেছে নাকি ঘুমাতে, ঠিক মিলাতে পারলাম না, ওদের দেখে মনে হচ্ছে তিন দিন-তিন রাত ঘুমায় নি, অথচ আমি নিজেও ঢাকা থেকে আসা বাসে ঘুমায় নি, আর আগের রাতেও আমি অফিস করেছি রাত ২টা পর্যন্ত। কার ঘুম কে যায়! ওদের ঘুম দেখে সত্যিই আমার হিংসা হচ্ছে। পৌঁছলাম দীঘিনালা। এখান থেকে চান্দের গাড়িতে যেতে হবে বাঘাইহাট, লোকাল চান্দের গাড়িতে উঠলাম, পেছনে বাঁদর ঝোলা মানুষ আর ছাদেও কোন সিট খালি নেয়। টিপুকে অনেক বারণ করা সত্ত্বেও সে উঠে পড়ল পাহাড়ি দের সাথে চান্দের গাড়ির ছাদে। বুঝাই যাচ্ছে, ম্যানেজারেরই এই অবস্থা, বাকিদের কে কন্ট্রোল করবে! কেন, আমি আছিনা! অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার! এবারের যাত্রাই প্রায় এক ঘণ্টা পর পৌঁছলাম বাঘাইহাট। এখান থেকে যেতে হবে আরেক লোকালে মাসালং অথবা রিজার্ভ নিয়ে সোজা সাজেক। এর আগে দীঘিনালাতে পরিচয় হলো পাঁচজনের একটা গ্রুপ রাকিব ভাই, আর শামীম ভাইদের সাথে। তাদের সাথে চুক্তিতে একটা চাঁদের গাড়ি রিজার্ভ করলাম সোজা সাজেক পর্যন্ত। এমন আঁকা-বাঁকা রাস্তা ধরে সাজেক যেতে হয়। কি ভয়ঙ্কর! তাই না? ছবি: Rakib Hasan কম্পিউটারে ভিডিও গেমস খেলতে বসেছেন, কোন কিছু হলেই আবার লেবেল ওয়ান থেকে শুরু করবেন। অনেকটা “কুচ পরোয়া নেহি” স্টাইলে আর আমাদের মনে হলো রোলারকোস্টারের যাত্রী। মনে পরে গেল ফ্যান্টাসি কিংডমের রোলারকোস্টারের কথা যার সাইনবোর্ডে লেখা ছিল “শিশু ও হার্টের রোগীদের উঠা নিষেধ”, তারপর রোলারকোস্টারে চোখ বন্ধ করা সেই বাঁক নেওয়ার কথা। এই রাস্তা-গুলোও কম কীসের সেই বাঁক, সেইরকম উঁচু, ওই যে অনেক উঁচু পাহাড় আমরা নাকি ওই খানে উঠবো, আলমগির ভাই তাই বললেন। উনি তেমন কোন ব্রেক-ট্রেক ধরার দার ধারছেন না। মনে হচ্ছে উনি আমাদের উপর রেগে-মেগে চালাচ্ছেন, ওনার কাছে এটা মামুলি ব্যাপার, ওই দিকে আমাদের-ত তেরোটা, আমি তেমন ভয় পাচ্ছি না, এর আগেও আমি এই রকম রাস্তায় অনেক এসেছি (মনে মনে এটাই একটা সান্ত্বনা)। তবে গাড়ির ভেতরে সবাই গল্প করছি এতে রাস্তাও দূরত্ব শেষ হচ্ছে, রাস্তা শেষ হওয়াও ধরকার কি, এই সব দেখার জন্যই তো এসেছি। হুম, একদম পাক্কা দেড় ঘণ্টা পর পৌঁছলাম সাজেক। প্রথমেই নেমে ভিক্টরি চিহ্ন দেখিয়ে একটা ছবি, ওদিকে আম্মা ফোন দিয়ে বললেন, “ওই জায়গায় কেন গেছোস, ওই খানে পাহাড় ছাড়া আর কি দেখার আছে!” আরে এখানে-ত সবাই পাহাড় দেখার জন্যই আসে। আমরা এখন ২ হাজার ফিট উপরে আকাশের অনেক কাছাকাছি, একটা প্যারাস্যুট থাকলে ভালো হত, এক জাম্প দিতাম, তারপর ঘুরে ঘুরে সব দেখতাম, তারপর এদিক-ওদিক ঘুরে রিসোর্ট ঠিক করতে হবে, অনেক হয়েছে এখন একটু রেস্ট দরকার, কিন্তু কোন রিসোর্ট খালি নেই, আলো রিসোর্ট নামের রিসোর্টে গিয়ে চাপা-টাপা মেরে নিলাম একটা রুম। ওমা! এই খানে-ত থাকার ছেয়ে খাবারের দাম বেশি, প্যাকেজ খাবার এক বেলা ৩০০ / ২০০ টাকা। কোন উপায় না পেয়ে ২০০ টাকার প্যাকেজ নিলাম, আনা গরিবুন, গরিব মানুষ আর কিছু করার নেয়। মেনু বন-মুরগি, আলু ভর্তা, ডিম আর সাথে ফ্রি ডাল। খেলাম সবাই খুব পেট পুরে মনে হচ্ছে ২০০ টাকার খাবার, কম খেলে পয়সা উশুল হবে না, আর খিদে তো আছেই, তবে ওই পাহাড়িদের রান্নাযে এত ভালো, তা না খেলে বুঝতাম না, টিপু চিকনা-চাকনা হলেও খাই ভালো, মনে হয় গলা পর্যন্ত পেট। টিপু আর জিসান প্রতিযোগিতা করে খেলো। কবি গাফ্ফার আবার খাবার সময় তেমন কথা বলে না, খুব মনোযোগী হয়ে খাই, কেন এভাবে খায় এটা একটা রহস্য, এখনো উদ্ঘাটন হয়নি। আর আমিতো খাওয়ার ছেয়ে কথা বলি বেশি। আমিও অনেক খেলাম, অন্য দিনের ছেয়ে বেশি। খেয়ে দেয়ে যত বিপত্তি, সবারই ঘুম চোখের সাথে আঠা দিয়ে লাগানো। আমি দুপুরে ঘুমানোর পক্ষে ছিলাম না, সবাই দেখছি ঘুমানোর জন্য হুমড়ি খেয়ে পরছে বিছানায়, মনে হয় হোটেল ভাড়া করে এখানে শান্তির ঘুম দিতে এসেছে, ঘণ্টা খানিক ঘুম দেওয়ার পর এইবার যাব কংলাম পাড়ায়, এই খান থেকে প্রায় ২-৩ কি. মি। যেতে হবে পায়ে হেঁটে, আর পুরাই খাঁড়া পাহাড়। যেতে যেতে দেখলাম সূর্য ডোবার সেই অপরূপ দৃশ্য। কংলাম পাড়ায় উঠে সবাই হাঁপিয়ে গেলাম, আনা মারিজুন খাতিমুন, সবার অবস্থা কেরোসিন! একটু রেস্ট নিয়ে এক চড়ি কলা চারজনে সাবাড় করে দিলাম। এই জায়গাও মানুষ বাস করে আসলে অবাক হওয়ার মত, সবকিছুই ছবির মত মনে হচ্ছে, এই পাড়ার পরে আর কোন ঘর বাড়ি নেই, এরপর পাহাড় আর পাহাড়, এই পাহাড়ের পর ভারতের পাহাড় আর মিজোরাম রাজ্য। ওইখান থেকে উঠলাম আরও একটা টিলাতে যেখান থেকে পশ্চিমের আকাশকে কত কাছে মনে হচ্ছে। দুহাত প্রসারিত করে ছবিও তুললাম। সূর্য ডোবার সময় আকাশ যে রং ধারণ করে আছে এতে ছবি তুললে নিশ্চিত সবাই ভাববে, এটা ফটোশপে ইফেক্ট দেওয়া ছবি। মাগরিবের নামাজ পড়লাম একটা পাথরের উপরে, খুব তৃপ্তির সহ নামাজ পড়লাম, নামাজে আল্লাহর এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এত অপরূপ লীলার কথাও স্মরণ এসে গেল। চারিদিকে খুব অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে এখন কংলাক থেকে ফিরতে হবে। সাজেক এসে অনেক ক্ষণ আড্ডা, এই আড্ডায় কেউ গান গাইলে ভালোই জমতো, কিন্তু কেউ গান জানেনা, জিসান মাঝে মাঝে বাংলা ছায়াছবির গান টান দেয়, তাও ওই দৌড় প্রথম দুই লাইন পর্যন্ত। আর আমাদের টিটকারিতে এর বেশি গাওয়া সম্ভব নয়। রাতে খেলাম ঠিক দুপুরের মত, একদম পেট পুরে, পয়সা উশুল করে। চোখও আর মানতে চাচ্ছে না। আর কত! রাতও অনেক, ১১ টা। মেলে দিলাম অলস দেহ বিছানায়, কম্বল নিয়ে কবি গফফারের সাথে টানা-টানির অভ্যাস সেই পুরোনো, হল থেকে। রাতে ঘুমালাম প্রায় অজ্ঞায় হয়ে, ঠিক ফজরের আগে উঠে নামাজ পরে বের হলাম সূর্য উদয় দেখব বলে। পাহাড়ের মেঘের মাঝে সূর্য উদয় দেখার অনুভূতি সেটা লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয়, মুহূর্তের মধ্যেই সূর্য কত রং পরিবর্তন করে। তাকিয়ে থাকলাম অনেক ক্ষণ মনে হচ্ছে দেওয়ালে বাধাঁনো কোন ছবির দিকে তাকিয়ে আছি। এত কোমল আর হিম-হিম বাতাস কত জনম গায়ে মাখিনি। ফেরার গাড়ির টাইম সকাল ৯টায়, চেনা পথে খাগড়াছড়ি আসতে আসতে বেলা ১২ টা। খাগড়াছড়িতে উঠলাম হোটেলে, জুম্মার নামাজ, খাওয়া-দাওয়া, এরপর আবার রুটিন মাফিক ঘুম, কিন্তু এইবার এত লম্বা ঘুম দিল সবাই একদম বিকেল হয়ে গেল, আর কোথাও যাওয়ার সময়ও নেই, সবাই খুব আফসোসও করল, কিন্তু আর কোন উপায় নেই, সব দোষ চাপানো হলো আমাদের কবি গাফ্ফারের উপর, তার আবার দুপুরে খেয়ে ঘুম না গেলেই নয়। এই ঘুম নাকি স্বাস্থ্য ও চেহারার জন্য ভালো। আমি কালা-চালা মানুষ এত কিছু বুঝিনা! কোথাও না যেতে পেরে, বিকেলে ঘুরলাম ক্যান্টনমেন্টের চারপাশ, সাথে সেই বন্ধু-মামা আর মামার বন্ধু মোস্তাফিজ ভাই। পরের দিন সকাল ১১টাই চট্টগ্রামের বাসের টিকিট, ওই দিন ভোর ৬টায় যাব আলু-টিলা, আর রিছাং ঝর্ণা, আলু-টিলায় আলু খুঁজে লাভ নেয়, আছে একটা গুহা, গুহাতে যেতে হয় মশাল নিয়ে, পাহাড়ি গাইড দাদা একটা মশাল হাতে ধরিয়ে দিলেন যার বিনিময় ১০ টাকা। গুহার সুড়ঙ্গ পথ ধরে পার হতে টাইম লাগবে ১২-১৫ মিনিট, এপাশ দিয়ে ঢুকে ওপাশ দিয়ে বের হতে হয়, এই পথটা অনেক অ্যাডভেঞ্চার মূলক, পার হওয়ার পর অনেক ভালো অনুভূতি সৃষ্টি হয়, মনে হয় এইমাত্র কোন দুর্জয়কে জয় করে এলাম, এখন যাব রিছাং ঝর্ণা, আলু টিলা থেকে বাসে একটু গিয়ে আরও ২-৩ কি. মি. পায়ে হাঁটতে হবে। হাঁটলাম ঘড়ির টাইম ধরে ঠিক ৩০ মিনিট লাগলো পৌঁছতে, ঝর্ণার নিছে খুব পিচ্ছিল জায়গা, একবার পিছলে খেয়ে পড়লে, ওই যে দেখা যায়, একদম নিচে! এবং কোমর সহ হাড়-ঘুর ভেঙে কিছুদিন রেস্টে থাকার সুযোগ পাওয়া যাবে। গোসল করার দুঃসাহস দেখিয়েছে আমাদের মেয়েলি জিসান, আমিতো দেখেই অবাক! অমন ছেলে! ওই জায়গাই গিয়ে গোসল করছে, আর আমরা, ছি! ছি! আমরা যদি ওই জায়গাই না নামি, তাহলে আজীবন জিসান এই দুঃসাহসের খোঁটা দেবে, ঝর্ণায় না নেমে উপায় নেয়, ঝর্ণায় গোসল দিয়ে খুব ভালো লাগবো, সব ক্লান্তি দুর হয়ে গেল। আর ছবিও তুললাম খুব মজা করে। আবার এখন ঢাল বেয়ে উপরে উঠতে হবে এমন কথা মনে হতেই পা যেন আর চলতে চাচ্ছিল না, কিছুই করার নেই ফিরতে যে হবেই, ১১ টার বাস, আমাদেরকে আলু টিলা থেকে তুলবে। এবার গন্তব্য চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সী-বীচ। ওখানে আমাদের সাথে যোগ দিল স্বাধীন বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজ উদ্দিন! উনি পিডিবি-র ইঞ্জিনিয়ার, উনি বললাম সম্মান দেখিয়ে! আসলে সে আমাদে তাজু, দুষ্টামি করে জিজ্ঞেস করলাম, কি তাজু, পিডিবি-র ক্যাবল বিক্রি করে ইনকাম কেমন! এরপর হো-হো করে হাসি। সী-বীচ স্পীড-বোর্ড আর ঘোড়ায় উঠলাম, ঘোড়ায় উঠে প্রতি ছবি তোলা ১০ টাকা, কিন্তু অনেক ছবি উঠে গেলো, ঘোড়া ওয়ালা-ত প্রতি ক্লিক হিসেব করে রেখেছে, পরে টাকা দিতে গিয়ে আমরা ‘থ’, এইত ক্লিকে-ক্লিকে টাকা! সী-বীচ থেকে ফিরতে উঠলাম সিএনজি-তে আর জিসান বলতে লাগলো আমরা সফলতার সাথে আমাদের টুর শেষ করতে যাচ্ছি, একটু পর কি ঘটতে যাচ্ছে, তা বুঝলে কি আর সে এ কথা বলতো! নামলাম আমাদের হালিশহর বাদাম-তলিতে উদ্দেশ্য কিছু ফল-মূল কিনব, কিন্তু কিছুক্ষণ পর আমাদের দলের সম্মানিত ম্যানেজারের স্মরণ হলো ওনার ব্যাগ সিএনজির ড্রাইবারের জন্য রেখে এসেছেন, আমিতো শুনেই আবার ‘থ’, দৌড় দিলাম বাস-স্ট্যান্ডের দিকে খুঁজলাম এগাড়ী ওগাড়ী, কই হারানো জিনিস কি আর ফেরত পাওয়া যায়। বাসায় ২ ঘণ্টা মধ্যে খাওয়া দাওয়া সেরে রওনা দিলাম তূর্ণা নিশি ট্রেন ধরার জন্য। টিপুর হারিয়ে যাওয়া ব্যাগের ভেতর ঝর্ণায় গোসল করা ভেজা কাপড়চোপড় দেখে ওই সিএনজি ওয়ালা লোক কি ভাববে সেটা নিয়ে সবাই হাসা-হাসি করলাম। যাওয়ার আগের আমার ফেসবুক স্ট্যাটাস “কথা ছিল হারিয়ে যাব”, এর কথা মনে পরে আরও হাসি পেলো। আল্লাহর কি রহমত আমরা হারালাম না ঠিকই, যাকিছু গেল টিপুর ওই ব্যাগের উপর দিয়ে। রাত ১১টার ট্রেনে সোজা ঢাকার উদ্দেশ্যে, ট্রেনে কারও মুখে হাসি নেয়, সবার মন খারাপ, টুর থেকে ফিরছি এই জন্য না, কাল থেকে আবার অফিস, এই ভেবে। অফিসে আসলাম অফিসও করলাম, কই অফিসে মন নেয়, অফিসের মন পরে রইল ওই পাহাড়ে আর ঝর্ণায়। লেখা: রাশেদুল হায়দার ছবি: আমি নিজে এবং Rakib Hasan ফেসবুকে কমেন্ট করতে এখানে ক্লিক করুন এই ভ্রমণ গল্টটি শিশু-কিশোর পত্রিকা “কিশোর কণ্ঠের” আগষ্ট, ২০১৫ সংখ্যায় প্রকাশিত।
শুভ জন্মদিন ২০২২ Aug 09, 2022 রম্য রচনা, স্মৃতির পাতা আজ আমার তেত্রিশ মতান্তরে পঁয়ত্রিশতম শুভ জন্মদিন! (বয়সে করোনাকালিন হিসেব বাদ দেয়া হয়েছে) ছবিটি আনুমানিক ২০ বছর আগের হারিকেন জমানার। ছত্রিশ ফিল্মের কোডাক ক্যামেরার। মেঘে মেঘে বয়স তো আর কম হলো না। সেই ১৫ টাকা সের চাল সময়কার ছেলে আমি। ৪০ টাকা নিয়ে বাজারে যেতাম। এর মধ্যে মাছ-তরকারি, মুদি সদায় সহ দুই টাকা বাঁচিয়ে .....
বই: প্রোডাক্টিভ মুসলিম Apr 22, 2022 ইসলামিক, বুক রিভিউ বইটি পড়ে কিছু ব্যাপারে আচার্য হয়েছি। বইটি হাতে নিয়ে পড়ার আগে মনে করেছিলাম, এর ভিতরে লেখা থাকবে শুধু কাজ আর কাজ। কিসের ঘুম, কিসের বিশ্রাম আর কিসের অবসর। হয়তো বলা থাকবে, এই দুনিয়াতে কি শুধু ঘুমাতে আসছেন। শুধু কাজ করেন আর অন্য কিছু নয়। পরবর্তীতে ঘুমের উপর চ্যাপ্টার পড়ে আরও বেশি আচার্য হয়েছি যে, .....
বই: ইন দ্য হ্যান্ড অব তা-লে-বা-ন Apr 01, 2022 ইসলামিক, বুক রিভিউ ১১ সেপ্টেম্বর, ২০০১। মঙ্গলবার। নিউইয়র্ক-বাসীর সকালটা শুরু হয় অন্যান্য দিনের মত! সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা নিউইয়র্কের লোকজন খুব সকালে উঠে যার যার অফিস শুরু করেছে। প্রতিদিনকার সকালের মত হয়তো কেউ কেউ চা-কপি দিয়ে মাত্র অফিস ডেক্সে ওইদিনের মত নিজেকে সেট করে নিচ্ছে। পৃথিবীকে নাড়া দিতে যাচ্ছে এমন কোন ঘটনা ঘটতে চলেছে তখনও এই .....
বই: ফজর আর করব না কাজা! Dec 02, 2021 ইসলামিক, বুক রিভিউ আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম! মাত্র ফজরের আজান হয়েছে। সামনের বাসার আঙ্কেলের বড় গেটের তালা খোলার খটখট আওয়াজ। তারপর আমার মোবাইলের এক নাম্বার এলার্ম ভেজে উঠলো। একরাশ বিরক্তিসহ এলার্ম বন্ধ করলাম। এই আলতো ঘুমের এমন ঝনঝন তালা খোলার শব্দ আর এলার্মের এমন ভিট-ঘুটে আওয়াজ সত্যিই বিরক্তিকর ছিলো। তারপর কোন রকম উঠে দায়সারা ভাবে নামাজ ঘরে .....
বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ রিভিউ: এ আমি কি দেখলাম? Nov 06, 2021 পত্রিকায় প্রকাশিত, রম্য রচনা অফিস থেকে মনে হয় একটু তাড়াহুড়া করেই বের হয়েছি। আজকে বাংলাদেশের চির প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার সাথে খেলা। কয়দিন আগেও এই অস্ট্রেলিয়াকে মিরপুরের মাঠে আমরা কচুকাটা করেছি। সেই হিসেব মতে আজ একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই উপভোগ করবো। টানটান উত্তেজনা থাকবে। বাংলাদেশ হাড় কাঁপানো ব্যাটিং করবে। মাঠ কাঁপানো ফিল্ডিং করবে। টানটান করে বাউন্ডারি হাঁকাবে। দর্শক সাড়ি থেকে বাংলাদেশ! .....
নাফাখুম জলপ্রপাত – নেটওয়ার্কের বাইরে একদিন Oct 28, 2021 ভ্রমণ কাহিনী আজকে যাবো। কালকে যাবো। এই বর্ষায় যাবো। এমন করতে করতে এক ট্যুরের প্ল্যান চলে প্রায় দুই বছর ধরে। এর মধ্যে করোনা। লকডাউন। শাটডাউন। মাস্ক। স্যানিটাইজার ইত্যাদি ইত্যাদি পৃথিবীতে নতুন করে আগমন করেছে। অন্যদিকে নাই হয়ে গেছে অনেক পরিচিত মানুষ, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-অনাত্মীয়। প্রতি বছর একটা জংলী ট্যুর দেয়ার ইচ্ছে থাকে। বড়সড় একটু গ্রুপ করে কোন .....